সিরাজগঞ্জে ফসলের সংঙ্গে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

কৃষকের সোনার ফসলে দেখা দিয়েছে নেক ব্লাস্ট রোগ। সেই রোগে পুড়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে বালাই নাশক প্রয়োগ করেও কোনো প্রকার প্রতিকার পাচ্ছে না তারা। তারপরও হাল না ছেড়ে দিনভর ব্যস্ত থাকছে ফসলি ক্ষেত রক্ষায়।

খাদ্যশস্য ভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জে বোরোর ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেতের পাতা পুড়ছে। পচন ধরছে গাছের গোড়ায়। মরছে সবে উঁকি দেওয়া কচি ধানের শীষ। কৃষকরা ত‍াই দিশেহারা। ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জনও পড়েছে হুমকিতে।

সিরাজগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে কৃষকের ধান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থদের দাবি,কৃষি অফিসের পরামর্শে সঠিক সময়ে ওষুধ প্রয়োগ করেও কোন লাভ হয়নি। আর কৃষি অফিস বলছে,তারা সঠিক সময়ে পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করেছেন,কিন্তু লোকবল সঙ্কটের কারণে কিছু কিছু জায়গায় সঠিক সময়ে তথ্য পৌছানো সম্ভব হয়নি।

উল্লাপাড়া উপজেলার প্রতাপ গ্রামের মুসলিম আলী ও কুদ্দুস জানান, বছরের ইরি-বোরো মৌসুমের আবাদ করা ধানের উপরই তাদের পুরো বছর চলতে হয়। প্রতি বিঘা ধান চাষে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। সুদে টাকা ধার নিয়েও কেউ কেউ ধান চাষ করে থাকেন। কিন্তু ভয়াবহ এই নেক ব্লাস্ট রোগের কারণে পুরো ধান পুড়ে গিয়ে জমিতে খড় টিকে রয়েছে। যে কারনে অনেক কৃষকই এবার সর্বশান্ত হয়ে পরেছে।

একই গ্রামের সেলিম জানান, ২০ শতক জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম, সবুজ সতেজ গাছ দেখে ভাল ফলন হওয়ার আশা করেছিলাম। কিন্তু শীষ গজানোর পর ধীরে ধীরে চিত্রটা পাল্টে যায়। একের পর এক মরতে থাকে ধানগাছের পাতা ও শীষ। এভাবেই এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুরো ক্ষেতের ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের হাসনা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন,চারা রোপণ থেকে শুরু করে শীষ গজানো পর্যন্ত কোনো সমস্যা ছিল না। শীষ গজানোর পরেই রোগ ধরে। ধীরে ধীরে পাতা ও শীষ পুড়ে যায়। ১০ থেকে ১২ দিনের ব্যবধানে ক্ষেতের সব ধানই নষ্ট গেছে। তিনি বলেন,কৃষি অফিসারদের কথামতো প্রথমদিকে বালাইনাশক প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাইনি।

একই এলাকার সিরাজ,সুলতান,শিবনাথপুর গ্রামের আব্দুল হাই, পাইকোশার রশিদ, রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মগাছা গ্রামের মেছের আলী, মোস্তাক হোসেন, উল্লাপাড়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চক নিহাল গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও আবু জাফরসহ শত শত কৃষকেরই অবস্থা একই।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়,ধানের পাতা ও শীষ পুড়ে যাওয়া এ রোগটির নাম ব্লাস্ট রোগ। এ রোগে প্রথমে পাতা পুড়ে যেতে শুরু করে। পরে ওই পাতাটি শীষের সংস্পর্শে এলে শীষও পুড়ে যায়। গত বছর এ রোগটি সিরাজগঞ্জের সদর, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া ও কামারখন্দ উপজেলায় ব্যাপকহারে ছিল। এ বছর তেমন ব্যাপক হারে দেখা দেয়নি। তবে কৃষকদের অসচেতনতা ও সময়মতো বালাইনাশক ব্যবহার না করায় বেশ কিছু এলাকায় রোগটি এবারও দেখা দিয়েছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সরেজমিনে এই প্রতিবেদককে কৃষকেরা আরও বলেন, গত বছরও এই রোগেই তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এ বছরও একই অবস্থা। কৃষি অফিসারদের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করেও ধান পুড়ে যাওয়া ব্লাস্ট রোগ থেকে রক্ষা হয়নি।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুল হক বলেন,আক্রান্ত বীজ থেকে ধানের নেক ব্লাস্ট রোগ ছড়ায়। নেক ব্লাস্ট রোগ প্রথমে পাতায় ধরে, তখন সেটাকে লিফ ব্লাস্ট বলা হয়। ধীরে ধীরে এটা শীষে যায়। একটি গাছে এ রোগ ধরলে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে।নির্দিষ্ট সময়ে বালাইনাশক দেয়া হলে এ রোগটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গত বছর এই রোগটা ব্যাপক হারে ছিল।

এ বছর আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি আক্রান্ত বীজ ব্যবহার না করা এবং শীষ গজানোর আগেই ওষুধ প্রয়োগের জন্য। যে কারণে এবার রোগটা অতিমাত্রায় বিস্তার লাভ করেনি।

তিনি আরও বলেন, এ বছর জেলার ৯টি উপজেলায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৪১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ হেক্টর জমির ধান ব্লাস্ট রোগে পুড়ে গেছে। আক্রান্ত এলাকার শীর্ষে রয়েছে কামারখন্দ, উল্লাপাড়া ও তাড়াশ উপজেলা। এছাড়াও কাজিপুর, সদর, রায়গঞ্জ, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলারও কিছু কিছু জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

উপ-পরিচালক হাবিবুল হক আরও বলেন, এ রোগটি আগে গমে ধরতো। বছর তিনেক হলো এটি ধানে ধরছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে এটি হয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রতি ইউনিয়নে কৃষি অফিসের লোক রয়েছে ২-৩ জন। কিন্তু কৃষকের সংখ্যা অনেক। লোকবল সঙ্কটের কারণে অনেক সময় দ্রুত তথ্য প্রচার করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে যারা আগে তথ্য পেয়েছে তারা উপকৃত হয়েছে। আর যারা দেরিতে তথ্য পেয়েছে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর