রেজিস্ট্রার ও বিভাগীয় প্রধানের দুর্নীতিতে বিপাকে জাককানইবি উপাচার্য

সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবীরকে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ই এস ই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ চেষ্টা ও ইএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও গবেষক ড. আশরাফ সিদ্দিকীর উপর চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওসেনোগ্রাফি (এফআইও ) নামক প্রোজেক্ট থেকে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ। পালটা পালটি অভিযোগের পর অনুসন্ধানে নামে বার্তাবাজার.কম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবীর তার নিজের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে ক্ষমতার ব্যবহার করে নিজের মতো নিয়ম করে বৈধ করার চেষ্টা করে তা নিজের পক্ষে রাখতে চান। আর তার শিক্ষক হবার পথে বড় বাধা বিভাগের প্রধান আশরাফ আলী সিদ্দিকী।রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন এর পূর্বেও ইউজিসির নিয়ম ভেঙ্গে নিজে ও পছন্দের ব্যক্তিদের পদোন্নতি করিয়ে সমালোচনার মুখিমুখি হোন। একক আধিপত্ত্ব বিস্তারে নিজের মতো করে ক্ষমতার ব্যবহার করে তৈরি করেছেন আইন। আর সেই বাধাকে সরাতে রেজিস্ট্রার বেছে নিয়েছে চীন থেকে নিয়ে আসা প্রকল্পকে। যে প্রকল্পে ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকীর প্রকল্প ব্যয় অস্বচ্ছ। যার মধ্যে নিজ বিভাগের শিক্ষক মোঃ নকিবুল হাসান খান বলেন , “আশরাফ সিদ্দীকীর অনিয়মে বিভাগ সংকটে আছে। তার প্রকল্পের ব্যয় এ অনেক ভুল তথ্য দেয়া আছে। তার প্রকল্পে ব্যায়কৃত অর্থের ব্যবহার অস্বচ্ছ “। যেখানে পানির মূল্য, বাস ভাড়া,ডালের বিল এর যে পরিমান ও মূল্য উল্লেখ করেছে তা ভিত্তিহীন। অনুসন্ধান করে উক্ত বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে।

আবার প্রকল্পের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আশরাফ আলী প্রকল্পের ব্যয় এর জন্যে আনা অর্থ তিন কিস্তিতে মোট ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ৯০ টাকা উত্তোলন করেন। যা উত্তোলন ও সংরক্ষণ এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এসটিডি হিসাব-৩৩২৮২০৩০০০০২৪ ও এসটিডি হিসাব-৩৩২৮২০৩০০০০০২ ব্যবহার করেছে। যেখানে এসটিডি হিসাব-৩৩২৮২০৩০০০০২৪ থেকে অর্থ উত্তোলন করতে হলে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী ও পরিকল্পনা দপ্তরের পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান এর স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। আশরাফ সিদ্দীকিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট হয় না এমন একটি হিসাব ব্যবহারের পরামর্শ দেন উপাচার্য প্রফেসর ড.এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান।যার এসটিডি হিসাব-৩৩২৮২০৩০০০০০২। যার প্রমান মিলে প্রথম কিস্তিতে চীন থেকে আসা অর্থ উত্তোলনের সময়।

২৫ লাখ টাকা অর্থ উত্তোলন করার সময় কেবল ৫০০০টাকা ব্যাংক চার্জ কর্তন করে পুরো টাকা নিয়ে নেন আশরাফ। কিন্তু পরবর্তীতে ১কোটি ৫০ লাখ ১১ হাজার ৩৬৭ টাকা উত্তোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০% অর্থ দিতে হবে বলে জানায়। যেখানে পূর্বে লেনদেন এর সময় কোন অর্থ চায়নি প্রশাসন। অন্যদিকে দেশের বাইরে থেকে আসা ফান্ড ব্যবহারে কোন নিতিমালা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। পরবর্তীতে উপাচার্যের মৌখিক নির্দেশে মোট অর্থের ৪% অর্থ একাউন্টে রাখতে হয়। এ বিষয়ে ট্রেজারার অধ্যাপক মোঃ জালাল উদ্দীন বলেন উপাচার্য মৌখিক নির্দেশে মোট অর্থের ৪%কর্তন করে বাকি টাকা দিতে উপাচার্য নির্দেশ দিয়েছেন যা আমি জানতাম না। আমার জানামতে সেটি ১০% রাখার কথা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর নিয়ম অনুযায়ী। তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথাও ২-৩%কর্তন করে আবার যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে কর্তন করে না। যেখানে ড. আশরাফ সিদ্দীকীর লেনদেনকে প্রশাসন বৈধতা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব ব্যবাহার করতে দিয়ে।

২০১৬ সালে প্রস্তাবনা পাঠানোর মধ্যদিয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অর্থ প্রথমবার ১৬ নভেম্বর ২০১৭ সালে ও পরবর্তিতে ৩ জানুয়ারি ২০১৯ এর উত্তোলনের অনুমতি দেয় প্রশাসন। দাপ্তরিক কাগজাদিতে বৈধ হলেও ব্যয় নির্ধারনে অনেকটাই অন্ধকারে আশরাফ সিদ্দীকী।

অন্যদিকে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জের ধরে দ্বন্দ প্রকাশ্যে আসে বিভাগের প্রধান আশরাফ সিদ্দীকী ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীরের। যেখানে নিয়োগ পেতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিভিন্ন শর্তে পরিবর্তন করানো হয় যেখানে বিভাগীয় প্রধান আশরাফ সিদ্দীকীর আপত্তিতে শেষ রক্ষা হয় নি হুমায়ুন কবীরের। অন্যদিকে ৫ আগস্ট ২০১৮ বিভাগের ৩ সদস্যের প্লানিং কমিটির এক সভায় কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত-৩ এ উল্লেখ থাকে- সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদনকারী কেউ শর্ত পূরণ করেনি তাই প্রবেশ পত্র প্রেরণ না করার সুপারিশ করা হলো।

যে আবেদনকারীদের মধ্যে কৃষিবিদ ড.হুমায়ুন কবির ছিলেন। পরবর্তীতে ১৮মার্চ ২০১৯ তারিখের প্ল্যানিং কমিটির সভায় কমিটির দুইজন সদস্য রকিবুল হাসান ও মোঃ নকিবুল হাসান খান পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে এসে প্রবেশপত্র পাবার সুপারিশ করে কিন্তু কমিটির সভাপতি আপত্ত্বি জানিয়ে তা আবার প্রেরণ করেন প্রশাসনকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন অনুযায়ী ৯২ পৃষ্ঠায় ৯ নং এ বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় এর কোন কতৃপক্ষ বা সংস্থার সিদ্ধান্তের সহিত ভাইস চ্যান্সেলর ঐক্যমত পোষণ না করিলে,তিনি তাঁহার দ্বিমত পোষণের কারন লিপিবদ্ধ করিয়া সিদ্ধান্তটি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বা সংস্থার নিকট পুনর্বিবেচনার জন্যে ফেরত পাঠাইতে পারিবেন, এবং যদি উক্ত কতৃপক্ষ বা সংস্থা পুনর্বিবেচনার পর ভাইস-চ্যান্সেলরের সহিত ঐক্যমত পোষণ না করেন তাহা হইলে বিষয়টি সিদ্ধান্তের জন্যে চ্যান্সেলরের নিকট প্রেরন করিতে পারিবেন এবং এই ক্ষেত্রে চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হইবে।

কিন্তু এই পথ অনুসরণ না করে সিন্ডিকেটে বিষয় উপস্থাপন করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যা বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন সম্মত নয়। যা রেজিস্ট্রার এর পক্ষপাত দুষ্ট।পুরাতন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হুমায়ুন কবীর অযোগ্য বিবেচিত হলেও উপাচার্যের ইচ্ছায় পুনর্বিবেচনার জন্যে আহ্বান জানানো হয়েছিল। এই নিয়োগে রেজিস্ট্রার এর মূল বাধা বিভাগের প্রধান আশরাফ সিদ্দীকী । তাই তাকে প্রধানের পদ থেকে অপসারন করাতে আশরাফ সিদ্দীকীর আনা প্রকল্পের অনিয়মকে বেছে নেন হুমায়ুন। যেখানে হুমায়ুন এর সঙ্গী হোন তারই বিভাগের অন্য শিক্ষক। যা প্রতক্ষ্য রূপ পায় নি। আবার আশরাফ সিদ্দীকীর প্রকল্পের ব্যয় হিসেবে রয়েছে অস্বচ্ছতা যা অভিযোগ হিসেবে সত্য । সব নিয়ে উভয় সংকটে উপাচার্য। একদিকে উপাচার্যের সদিচ্ছায় হুমায়ুন কবীরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ চেষ্টা অন্যদিকে আশারাফ সিদ্দীকীর প্রকল্পে উপাচার্যের স্বাক্ষর এবং অর্থ উত্তোলনে নিয়ম এর তোয়াক্কা না করে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি উপাচার্য।

শিক্ষক নিয়োগ ও প্রকল্পের অস্বচ্ছতা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে আশরাফ সিদ্দীকী বলেন- রেজিস্ট্রার আমার বিভাগের শিক্ষক হবার জন্যে এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন। তার যোগ্যতা না থাকা স্বত্তেও শিক্ষক হতে চাওয়াটা অন্যায় আর আমি তা মানবো না তাই আমাকে সরানোর জন্যে সে আমায় আর আমার প্রোজেক্ট এর পিছনে লেগেছে। আমাকে সড়াতে পারলে তার রাস্তা পরিষ্কার হয়।

প্রকল্প বিতর্ক আর আপনার স্বার্থে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার কৃষিবীদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমি কোন রাজনীতির মধ্যে নেই। প্রশাসনের যা দরকার সেটা মনে করেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।”

তিনি আরো বলেন ,”প্রশাসন(উপাচার্য) পরিবর্তন হলে নিয়মেও পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক। আর উনার প্রকল্পে অস্বচ্ছলতা আছে। ভুল বুঝিয়ে উপাচার্যের স্বাক্ষর নিয়েছেন তিনি যেখানে সেই স্বাক্ষর করার কথা আমার, এটা আইনের বাইরে,বেআইনি কাজ করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে শিক্ষক নেতা সিদ্ধার্থ দে সিধু বলেন, “যদি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটিও শর্ত না মানে তবে সেই নিয়োগ হওয়া উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন এর বাইরে কোন কিছু হতে পারে না।”

অন্যদিকে শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন- “পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে যেটা হচ্ছে সেটা দুঃখজনক। বিভাগীয় প্রধানের বিষয়টি তদন্তধীন। আমি জানি উনি কারণ দর্শানোর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমি সকল অন্যায়ের বিপক্ষে। কিন্তু ঐ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে আবেদনের যোগ্যতা যে প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। বর্তমান সময়ে ৪টি প্রথম শ্রেণী ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ কোনোভাবে কাম্য নয়। প্রশাসনকে ইউজিসির নীতি অনুসরণ করা উচিত বলে মনে করি।”

রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) ও উপাচার্যের কাছে দেয়া আশরাফ সিদ্দীকীর কারন দর্শানোর উত্তর যা গোপনীয় সেই নথি অন্য আরেক শিক্ষকের কাছে দেখতে পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, সরকারী চাকুরীজীবী পেনশন পেতে হলে কমপক্ষে ২৫ বছর কর্মরত থাকতে হয়। যা হুমায়ুন কবীর রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পাবে না অন্যদিকে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে পারলে তা সম্ভব। অন্যদিকে প্রায় অচল হয়ে পরা ইএসই বিভাগের সচল রূপ চায় শিক্ষার্থীরা

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর