ক্ষমা চাইলেন আয়মান সাদিক

প্রতিষ্ঠানে শাওন চৌধুরী নামে এক কর্মীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠে। এর পরই তদন্তের ভিত্তিতে ‌‘টেন মিনিট স্কুল’ কর্তৃপক্ষ তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বহিষ্কার করা তো দূরের কথা, বরং আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন তিনি।

গত রোববার শামসাদ নাভিয়া নভোলি নামের ওই ছাত্রী নিজের ফেসবুক পোস্টে এই অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তার সাথে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলের সাবেক ছাত্রী নভোলি জানান, ২০১৬ সালে এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি এবং তার বন্ধু বিতার্কিক শাওন চৌধুরী। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে শাওন তাকে নানাভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

স্কুল শিক্ষার্থীদের ওই বিতর্ক প্রতিযোগিতা চলাকালীন শাওন তার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা জোর করে হাত দেন। নভোলি বারবার বাধা দিলে শাওন বেশ সহিংস হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

পরে আয়োজক ও বিতার্কিকদের সংগঠনের নেতাদের কাছে অভিযোগ করে বিচার পাননি। বরং তাদের পরামর্শে বিষয়টি চেপে যান ঢাবির ওই ছাত্রী।

এরপর শাওন চৌধুরী ‘টেন মিনিট স্কুলে’ যোগ দিয়ে সেখানে নভোলির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়রদের কাছে নভোলির বিষয়ে কুৎসা ছড়ান। বিতার্কিকদের বিভিন্ন ফোরামে ইতিমধ্যে শাওনের বিরুদ্ধে নভোলির অভিযোগ নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে।

সেসব অভিযোগকে বানোয়াট বলে প্রচার চালিয়ে শাওন দাবি করতে থাকেন, নভোলি শাওনের প্রেমে পড়েছিলেন, এবং তাতে সাড়া না দেওয়ায় শাওনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন।

নভোলি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, এমন প্রচারণার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শাওনের অপকর্মের বিষয়ে ‘টেন মিনিট স্কুল’ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। বেশ কয়েকবারের চেষ্টার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং সেখানকার কর্মকর্তা সাকিব বিন রশিদকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বিতার্কিকদের কয়েকজন এবং নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছিল যে অনুষ্ঠানে সেটির আয়োজকদের সহায়তায় তদন্ত শেষে আয়মান সাদিকের অবগতিতে ‘টেন মিনিট স্কুলে’র সব বিভাগের প্রধানদের এক বৈঠকে শাওনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ শাওনকে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু এরপর আর অভিযুক্তকে বহিষ্কার করা হয়নি। এমনকি তদন্তে যৌন নিপীড়নকারী হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার পরও স্কুলের নারী কর্মীদেরকে শাওনের ব্যাপারে সর্তক করা হয়নি- এমনটি দাবি নভোলির। উল্টো আয়মান সাদিক তাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে আগের মতোই চলেছেন।

এমনকি বিগত বইমেলায় (বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর) শাওনের নামে নিজের একটি বই উৎসর্গ করেছেন আয়মান সাদিক। যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পর গত কয়েক মাসে শাওন ‘টেন মিনিট স্কুলে’ও আয়মান সাদিকের সঙ্গে আগের মতোই কাজ করছিলেন।

অবশ্য নভোলির ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর গত সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট করছেন আয়মান। ওই পোস্টে তার দাবি, পুরো বিষয়টিতে তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠান সঠিক ভূমিকা নিতে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

তবে ভবিষ্যতে আর এমনটি হবে না- সেই আশ্বাসও দিয়েছেন ‘টেন মিনিট স্কুলে’র প্রতিষ্ঠাতা।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর