ওয়াসার এমডিকে ‘সুপেয় পানির শরবত’ খাওয়াতে এসেছেন জুরাইনবাসী

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে ওয়াসার ‘সুপেয় পানির’ শরবত খাওয়াতে প্রতিষ্ঠানটির ভবনের বিপরীত পাশে অবস্থান নিয়েছেন রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দারা।

ওয়াসার এমডিকে শরবত খাওয়াবেন বলে ব্যাগে করে জুরাইন এলাকার পানি নিয়েও এসেছেন তারা। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিজানুর রহমান নামে এক যুবক।

আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১১টায় তারা কারওয়ান বাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

‘ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়’- ২০ এপ্রিল সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে ওয়াসার পানির শরবত বানিয়ে এমডিকে খাওয়ানোর কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

মিজানুর রহমান নামের জুরাইন এলাকার ওই বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ওয়াসার পানি ড্রেনের পানির মতো অপরিষ্কার। এটা খাওয়া তো দূরের কথা, গন্ধে হাতে নেওয়াই যায় না। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডি কীভাবে বলেন ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়, বিশুদ্ধ! তাই আমরা এই পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়াতে এসেছি।’

এদিকে জুরাইনবাসীর এমন কর্মসূচিতে ওয়াসা ভবনের গেটে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। তাদের ব্যতিক্রমী এই কর্মসূচি ঘিরে ওয়াসা ভবনের সামনে লোকজনের জটলা তৈরি হয়েছে।

মিজানুর রহমান বলেন, পূর্ব জুরাইনের দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের এলাকার পানি খুবই খারাপ, দুর্গন্ধযুক্ত ও ড্রেনের পানির মতো। ২০১২ সালে আমরা জুরাইনের সাড়ে ৩ হাজার বাসিন্দা গণস্বাক্ষর নিয়ে ওয়াসার এমডি বরাবর একটি অভিযোগ করেছিলাম। সেই অভিযোগে কোনো কাজ হয়নি। এখনো প্রতিদিন ময়লা পানি আসে। আমরা কয়েক বছর ধরে ওয়াসার পানি শুধুমাত্র গোসল, কাপড় ও বাসনকোসন ধোয়ার জন্য ব্যবহার করছি। খাওয়ার জন্য মসজিদের টিউবওয়েলের পানি কিনে খাচ্ছি। প্রতি ১০ লিটার পানির জন্য ২ টাকা দিতে হয়। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডি কী মনে করে পানিকে শতভাগ সুপেয় বললেন, তা আমাদের বোধগম্য হয়নি। আজ আমরা এসেছি এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করবো।

কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা একসঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে যাই, তাদের অনেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ কর্মসূচি দিয়েছি। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আমরা ওয়াসা ভবনে গিয়ে এমডির জন্য ওয়াসার বিভিন্ন কলের পানি নিয়ে এসেছি। যদি তার ডায়াবেটিস থাকে তাহলে শুধু লেবু দিয়ে শরবত তৈরি করে খাওয়াব। তিনি খেয়ে বলবেন, পানি কতটুকু সুপেয়।’

প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ওয়াসায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে টিআইবি।

এতে আরও বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সিদ্ধ করে পান করে। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতি বছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়।

এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াসার এমডি তাকসিম খান বলেন, ‘ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়, বিশুদ্ধ। একে ফুটিয়ে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।’ এছাড়া টিআইবির এই প্রতিবেদনকে তিনি নিম্নমানের বলে উল্লেখ করেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর