নুসরাত হত্যাকাণ্ড: সরাসরি অংশ নেয়া ৫ জনের জবানবন্দি

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া ৫ জনই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

রোববার ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নুসরাত হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম।

সিরাজের হুকুমেই হত্যা:

শামীমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে কিভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে, কারা ঘটিয়েছে, কিভাবে ঘটিয়েছে। তার স্বীকারোক্তিতেই উঠে আসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন ও কাউন্সিলর মাকসুদুর রহমান মকসুদসহ অন্যান্যের নাম।

অপরাধ স্বীকার করে শামীম আদালতকে জানান, তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কিলিং মিশনে আরো অনেকেই অংশ নিয়েছিল। হত্যার পরিকল্পনায়ও অনেকের সংশ্লিষ্টতা ছিল। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কারাবন্দি সিরাজ উদদৌলার কাছ থেকে হুকুম পেয়েই তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

পপির নাম গোপন রেখেছিল হত্যাকারীরা:

গত শুক্রবার বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আরেক আসামি উম্মে সুলতানা পপি (শম্পা)।

সে জানায়, নুসরাতকে হত্যা করার জন্য ঘটনার দিন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সে-ই ছাদে ডেকে নিয়ে গেছে। তার নাম পপি হলেও সেদিন হত্যাকারীরা তার পরিচয় গোপন রেখে ‘শম্পা’ নামে ডেকেছিল। সেজন্য নুসরাতও নিজের বয়ানে তাকে ডেকে নেওয়া বোরকা পরিহিত ছাত্রীটির নাম শম্পা বলে গিয়েছিল।

জবানবন্দিতে পপি জানায়,সে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। বান্ধবী নিশাতকে ছাদে কেউ মারছে এমন খবর দিয়ে সে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর অন্য সহযোগীরা মিলে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েক ঘন্টা সময় নিয়ে আদালতে এই জবানবন্দি দেয় পপি। তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।

আগুন দেয় জাবেদ, বুক চেপে ধরে মনি:

শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে একই ধরণের জবানবন্দি দেয় আসামি জাবেদ ও কামরুন্নাহার মনি। কয়েক ঘন্টার জবাবন্দি রেকর্ডের পর রাত ১০টার দিকে তাদের স্বীকারোক্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পিবিআই’র চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল।

তিনি বলেন, আদালতে এ দুইজন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, তারা তাদের সহপাঠী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার কিলিং মিশিনে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তারা তাদের সহপাঠী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার মিশিনে সরাসরি জড়িত ছিল। জাবেদ নুসরাতের সারা শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয়। আগুন ভালো করে লাগার জন্য মনি নুসরাতের বুকসহ শরীর চেপে ধরে।

ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন ধরায় জুবায়ের:

সর্বশেষ রোববার বিকালে একই আদালতে জবানবন্দি দেয় সাইফুর রহমান মো. জোবায়ের। জোবায়ের আদালতে স্বীকারোক্তি দেয় সে ঘটনার দিন কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নিয়ে নুসরাতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেয় এবং ম্যাচের কাঠির মাধ্যমে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এছাড়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নুর উদ্দিন, হাফেজ আবদুল কাদের ও আবদুর রহিম শরীফ। তারা হত্যার সাথে জড়িত থাকলেও কিলিং স্পটে ছিলেন না।

গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিমের আরবি পরীক্ষা প্রথম পত্র দিতে গেলে মাদ্রাসায় দুর্বৃত্তরা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫দিন পর ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায়।

পরদিন ১১ এপ্রিল বিকেলে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামী করে নুসরাতে ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে।

১০ এপ্রিল থেকে মামলাটির দায়িত্ব পায় পিবিআই। সেই থেকেই গ্রেফতার হতে থাকে আসামিরা। এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ২০ জন আসামি, আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ৭ জন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর