গোপন তালাকের প্রতারণা!

প্রতারণার মাধ্যমে তালাক গোপন রেখে সন্তানের বাবা হয়েছেন বরগুনার এক যৌতুকলোভী স্বামী। যৌতুকের দাবিতে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে শ্বশুর-শাশুড়িও। বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রতারণার শিকার স্ত্রী। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী স্ত্রী ও তাঁর অসহায় বাবা-মায়ের। অভিযুক্ত স্বামীর নাম সবুজ ওরফে আকাশ (২৮)। বরগুনার উত্তর লাকুরতলা গ্রামের মো. মঞ্জুরুল হকের ছেলে সে। পিতা মঞ্জুরুল হক এবং ছেলে সবুজ ওরফে আকাশ দু’জনেই পেশায় গাড়ি চালক ও পিকআপ ভ্যান ব্যবসায়ী।

ভুক্তভোগী স্ত্রী বর্ষা মনি (২৩) ও তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষামনি যখন ছোট তখন তাকে তার খালা পারভীনের বাড়িতে রেখে মা রেখা বেগম কাজের সন্ধানে সুদূর মরিশাসে যান। খালার বাড়িতেই বড় হতে থাকে বর্ষামনি। একসময়ে খালাত ভাই সবুজ ওরফে আকাশের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে বর্ষামনির। পরে উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পরেই শুরু হয় বর্ষামনির দুর্ভাগ্যের জীবন।

সুদূর মরিশাস থেকে মা রেখা বেগম বিভিন্ন সময়ে ব্যবসার জন্য তাঁর কষ্টার্জিত প্রায় ১০ লাখ টাকা পাঠান মেয়ে জামাই সবুজসহ তাঁর মা-বাবা পারভিন ও মঞ্জুরুল হকের কাছে। আর এটিই কাল হয়েছিল রেখা ও তার মেয়ে বর্ষামনির জন্য। সব টাকা আত্মসাৎ তো করেছেনই উপরন্তু মেয়ে জামাই সবুজ ও তার বাবা-মা বর্ষামনির মা রেখা বেগমের কাছে একটি পিকআপ ভ্যান কেনার জন্য আরও টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে শোধ করবেন বলেও একটি টাকাও ফেরৎ দেননি তারা।

এরপরও টাকার জন্য বর্ষামনির ওপর চলতে থাকে স্বামীর নির্যাতন। শশুরবাড়ির নিপীড়ন। এরপর ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কথা বলে স্বাক্ষর নিয়ে বর্ষমনিকে গোপনে তালাক দেয় স্বামী সবুজ ওরফে আকাশ। গোপন তালাকের পরেও স্বামীর অভিনয় করে যায় সবুজ। তালাকের আগেই সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে বর্ষামনি। একই সঙ্গে যৌতুকের জন্য চলে নির্যাতন। নির্যাতনের অতিশয্যে বাধ্য হয়ে রাজধানী ঢাকায় বাবার কাছে চলে যায় বর্ষামনি।

গোপন তালাকের আট মাসের মাথায় চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে বর্ষামনি। সন্তান হওয়ার সময় স্বামী সবুজ এবং তার বাবা-মা রাজধানী ঢাকায় বর্ষামনির বাসায় যান।

আবারও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলে স্বামী-স্ত্রীর সংসার। সদ্যপ্রসূত কন্যা সন্তান নিয়ে আনন্দ ফূর্তিও করেন বর্ষার স্বামী ও তার শ্বশুর-শাশুড়ি। ক’দিন পরেই যৌতুকের দাবিতে বর্ষামনির ওপর আবারও শুরু হয় নির্যাতন। এদিকে বিদেশ থেকে ফিরে এসে মেয়ের নির্যাতনের সব ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন বর্ষামনির মা রেখা বেগম। এরপর সবুজ ওরফে আকাশ ও তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে একটি যৌতুক মামলা দায়ের করে বর্ষামনি।

বর্ষামনির পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম মজিদ জানান, সহজ সরল বর্ষামনি ও তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সবুজ ওরফে আকাশ ও তার পরিবার যে প্রতারণা করেছে তা নির্মম। যৌতুক দাবির মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রতারক স্বামী সবুজ ওরফে আকাশ সেই গোপন রাখা তালাকের কাগজ দেখিয়ে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে জামিন পেয়ে যান। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বর্ষামনির পক্ষ হয়ে পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান তিনি।

বর্ষামনির মা রেখা বেগম বলেন, ‘আমার ১০ লাখ টাকাও আত্মসাৎ করলো, আবার আমার মেয়ের জীবনটাও নষ্ট করে দিল ওরা। আমি এর বিচার চাই’। ভুক্তভোগী স্ত্রী বর্ষামনি জানান, সন্তান পেটে থাকা অবস্থায়ও তাকে নির্মম নির্যাতন করেছে স্বামী সবুজ ও তার মা পারভিন বেগম।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সবুজের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। সবুজের বাবা মঞ্জুরুল হকের সঙ্গে কথা বললে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর