ভবিষ্যতে ক্রিকেট সফরে থাকবে বিসিবির নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদ আল নুরে নারকীয় হত্যাজজ্ঞের পর বিশ্বব্যাপি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে চিন্তার সময় চলে এসেছে। ক্রাইস্টচার্চের ওই ঘটনায় আক্রান্ত হতে পারতো বাংলাদেশের পুরো ক্রিকেট দল। আল্লার অশেষ রহমতে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বেঁচে যান মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা।

ঘটনার সময় জুমার নামাজ পড়তে সেই মসজিদ আল নুরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। যদিও তারা মসজিদে পৌঁছার আগেই নারকীয় হত্যাজঞ্জের ঘটনা ঘটে যায়। ওই সময় বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। যা নিয়ে দেশ-বিদেশে তুমুল সমালোচনা তৈরি হয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছেও এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। এমনকি বিসিবির পক্ষ থেকে ক্রিকটে নিউজিল্যান্ডের কাছেও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করা হয়। ঘটনার দিনই বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে ক্রিকেট দলের বিদেশ সফরে নিরাপত্তার বিষয়টাই আগে খতিয়ে দেখা হবে। এরপরই দল সফরে যাবে কি যাবে না- তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দেশে ফিরে এসেছে শনিবার রাতেই। রোববার বঙ্গবন্ধুর ৯৯তম জন্মদিবস এবং শিশু দিবস উপলক্ষে বিসিবি বন্ধ ছিল। আজ দুপুরে ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার জন্য শুকরানা মিলাদের আয়োজন করা হয় বিসিবিতে।

সেই মিলাদ মাহফিলের পরই মিডিয়ার সামনে কথা বলেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। সেখানে আবারও উঠে আসে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি। এমনকি বিসিবি প্রধানকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ভবিষ্যতে কোনো সফরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবির নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে কি না। জবাবে বিসিবি প্রধান জানিয়ে দেন, প্রয়োজন হলে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবির নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যেহেতু প্র্যাকটিসিং মুসলিম। মসজিদে যেতে হয়, নামাজ পড়তে হয়- এসব দিক বিবেচনা করা নিজস্ব সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হবে কি না জানতে চাইলে বিসিবি প্রধান বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য আরো একটা ইস্যু। বিদেশে সাধারণত সিকিউরিটি দেয়া হয় খেলার মাঠে, হোটেল থেকে মাঠে যাওয়া-আসা। এ ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবস্থা থাকে না। তবে ওদের (দ্বিপাক্ষিক সিরিজের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক দেশ) সাথে আগে বলে কিছু করা যায় কি না তা আমরা দেখবো। আমাদের এখান থেকে সিকিউরিটি যাবে কি না তা নির্ভর করবে আমরা কি পাচ্ছি, তার উপর।’

আগের অবস্থার সঙ্গে এখনকার অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে হিসেবেই এখন চিন্তা-ভাবনা করতে হবে বলে জানান বিসিবি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আগে তো বিষদ আলোচনা করতাম না। নিউজিল্যান্ডে তিনদিন ছিলাম, সেখানে কোনো পুলিশই দেখিনি। ওই দেশটাই হয়তো এমন। পুলিশ থাকলেও তারা মসজিদে পাহারা দেয়ার কথা চিন্তাই করেনি; কিন্তু নতুন ঘটনা চোখ খুলে দিয়েছে। এখন ব্যবস্থা নিতেই হবে। আমাদের যদি মনে হয় বিদেশ থেকে যা দিচ্ছে, তা যদি যথেষ্ট মনে না হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিবো (নিজস্ব সিকিউরিটি পাঠাবো)। তবে এটা তারা যা দিচ্ছে, তার উপর নির্ভর করবে।’

মহা বিপদ থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে জাতীয় দল। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে দলকে কিভাবে রক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হবে? প্রশ্ন রাখা হয় বিসিবি সভাপতির সামনে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে রিয়েলিটি (বাস্তবতা) বুঝতে হবে। পাকিস্তানে নারী দল খেলতে যাওয়ার আগে আমরা কিন্তু নিরাপত্তার লোক পাঠিয়েছি। ডিজিএফআই থেকেও লোক পাঠিয়েছি, সেখানকার নিরাপত্তা বোঝার জন্য। পাকিস্তানে যেটা হয়েছে, বাংলাদেশের মতোই তারা নিরাপত্তা দিয়েছে। উপমহাদেশে নিরাপত্তা দেখি এক রকমভাবে।’

উপমহাদেশের বাইরে নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখা হয় জানিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘অন্য দেশে দেখেন, ক্রিকেট খেলার কথা বলি, উইকেতে (ইংল্যান্ড) সিকিউরিটি একদম ভিন্ন। আমাদের মতো সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা আমরা কোথাও দেখি না। আপনি যদি অস্ট্রেলিয়া যান, নিউজিল্যান্ড বা সাউথ আফ্রিকা যান, ওদের একেক জায়গায় একেক রকম (সিকিউরিটি)। লন্ডনে যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছিলো, সেখানেও সিকিউরিটি বলতে ছিল নামমাত্র। সেখানে পুলিশ-বন্দুক-গাড়ি, এগুলো দেখাই যায় না। এটাই ওদের সিস্টেম। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাও একই রকম। সিঙ্গাপুরে আমার নিজের অভিজ্ঞতা, রাষ্ট্রপতি যায় শুধু একটা মোটরসাইকেল নিয়ে। এটাই ওদের সিস্টেম।’

পাপনের বিশ্বাস, ক্রাইস্টচার্চে ঘটনার পর নিরাপত্তার ধারণাটাই পাল্টে যাবে সবার কাছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হবে এখন প্রতিটি দেশে। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, আমরা যখন সিকিউরিটি নিয়ে কথা বলতে যাই, ওদের ধারণা আমাদের কেউ কিছু করবে না। যেনো যতো ভয়, শুধু ওদের। আমাদের আবার মারবে কে? এ রকম একটা ভাব। ওরা মনে করে, সিকিউরিটা ওদের বেশি দরকার। মাথার মধ্যে ওদের এটাই চিন্তা। তবে এই ঘটনার পর সিকিউরিটি ইস্যু সব জায়গায় জোরদার করা হবে। আমাদের তরফ থেকে অবশ্যই, আগে যেটা বলতো তা মেনে নিয়েছি, এমওইউ-তে বলা থাকে সব সিকিউরিটি ওরা দেখবে। ওদের উপর সব ছেড়ে দিতাম। কিন্তু এটা আর ছাড়বো না। সামনে আগের চেয়ে ভালো হবে সিকিউরিটি।’

তাহলে কি আগামী আয়ারল্যান্ড সিরিজেই বিসিবি থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে? বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘এ রকম কোনো চিন্তা এখনো করিনি। আমরা এখন যে কোনো দেশে যাওয়ার আগে নিরাপত্তা পরিকল্পনা চাইবো। সেটা ঠিক মতো প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা দেখতে কাউকে পাঠাবো। সিকিউরিটির লোকই পাঠানো হবে, ব্যাপারটা তা নয়। কাউকে পাঠানো হবে। দেখা হবে ওরা যা বলছে, তা ঠিক মতো আছে কি না। এরপর যদি মনে হয়, তাহলে আমরা প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নিবো।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর