দু-একটি ঘটনা ছাড়া ‘সফল’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

দায়িত্ব নেয়ার ১০০ দিন পূর্ণ করল সরকার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন টানা তৃতীয় মেয়াদের এ সরকারকে দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ, বাংলা নববর্ষসহ নানা উৎসবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন সুনাম কুড়িয়েছে, একইভাবে সুবর্ণচরের ধর্ষণ আর ফেনীর কলেজছাত্রী নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়ার ঘটনায় ‘বিতর্কিত ভূমিকায়’ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে সুশৃঙ্খল এ বাহিনী।

সরকারের আগের মেয়াদে প্রথমে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। এরপর পান পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিত্ব। আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের মতো ‘বেফাঁস মন্ত্রব্য না করায়’ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর অনেকটা নির্ধারিত ছিল যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হতে চলেছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ঠেকাতে মন্ত্রী হিসেবে প্রথম দিন থেকে ১০০ দিন পর্যন্ত প্রতিদিনই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো-

রেকর্ড সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ

ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ। টেকনাফে একসঙ্গে ১০২ মাদক ব্যবসায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। একসঙ্গে এত মাদক ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুল রহমান বদির আপন তিন ভাইসহ ঘনিষ্ঠ আট আত্মীয় ছিলেন। সরকারের ১০০ দিনে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে ধরা হচ্ছে।
নির্বাচন পরবর্তী নিরাপত্তা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৮০ শতাংশ পুলিশ সদস্যকে দেয়া হয় নির্বাচনী ডিউটি। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের পরের সময়টা বেশ সংবেদনশীল যায়। এ সময় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবার সহিংসতা রোধে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে ছিল র‌্যাব, আনসার ভিডিপি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা।

এবার নির্বাচনের পর দেশের কোথাও তেমন কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এক্ষেত্রে সরকারের শুরুটা ভালো হয়েছে বলে সর্বমহলে বিবেচিত হয়।

সুবর্ণচরের ধর্ষণ ও নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা

দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সফলতার পাশাপাশি প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছে বাহিনীগুলো। ৩০ ডিসেম্বর রাতে ধানের শীষে ভোট দেয়ার জেরে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গণধর্ষণের শিকার হন এক নারী। এ সময় কথিত আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সদস্যরা গৃহবধূর স্বামী, ছেলে ও মেয়েকে পিটিয়ে আহত করে। ঘটনার পরপরই গোপনে গৃহবধূ ও আহতদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়। প্রথমে পুলিশের বিরুদ্ধে ওই ঘটনা তদন্তে ‘ঢিলেমি’র অভিযোগ থাকলেও পরবর্তীতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন >> সকালে ভোটকেন্দ্রে তর্কাতর্কি, রাতে গৃহবধূকে গণধর্ষণ

অপরদিকে, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ।

গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। সে সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। কিন্তু রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

নুসরাতের মৃত্যুর পর সোনাগাজী থানার ওসির করা একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হয় বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি। যদিও ওসি মোয়াজ্জেমের বিতর্কিত ওই ভিডিওটির জন্য তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

ইজতেমা ও জাতীয় দিবসগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

ইজতেমার বয়ান ও মোনাজাত নিয়ে কয়েক বছর ধরে তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপ দুই রকম ‘আবদার’ করে আসছিল। এ কারণে চলতি বছর দুই গ্রুপের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একদফা স্থগিত করা হয় ইজতেমা। এরপর ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্ব এবং ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় মোট চারদিন ইজতেমা পালিত হয়। অনুষ্ঠিত হয় দুটি মোনাজাতও।

ইজতেমার দুই গ্রুপের ওই রেষারেষিতে অনেকেই বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি বা হতাহতের আশঙ্কা করেছিলেন। তবে র‌্যাব-পুলিশের তৎপরতায় সে ধরনের কিছুই হয়নি। এছাড়া নির্বাচনের পর ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে রাজধানীসহ সারাদেশ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ।

১০০ দিনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহা-পরিদর্শক (এআইজি- মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

প্রতিটি উৎসব ও জাতীয় দিবসগুলোতে পুলিশ অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। মাদক উদ্ধার ও আসামি গ্রেফতারেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। জঙ্গিবাদও মাথাচাড়া দিতে পারেনি। আশা করছি, পরবর্তী দিনগুলোও পুলিশ এ সাফল্য ধরে রাখবে- যোগ করেন তিনি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর