একজন শিল্পী রাণী মোদক অনুপ্রেরণা ও স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি

৩৭তম BCS এর ৩৪তম সুপারিশকৃত মেধাক্রম (প্রশাসন)। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে HSC রেজাল্টে এ প্লাস না পাওয়ায় কত যে কষ্ট, কত যে চোখের জল ফেলেছে! চরম হতাশা ও নৈরাশ্যে বিধ্বস্ত হয়েও তিনি ভেঙ্গে পড়েনি একবারের জন্যও! প্রবল প্রত্যয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছেন বারবার। তিন চারটে টিউশনি, আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ছাড়া কোন সময়ই নষ্ট হতে দেননি তিনি।

নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার আগে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে বিদায় পূর্ববর্তী আলাপে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তিনি তার জীবনের সংগ্রামের সত্য গল্প শুনান সবাইকে। তিনি বলেন “বাবা ম্যানেজার পোস্টে চাকুরি করতেন সিলেটের মহাজনপট্টির এক অ্যলুমিনিয়ামের দোকানে।মা আমাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে থাকতেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায়। তখন আমার ২ বছর আর দাদাভাইয়ার ৪ বছর। আমাদের দুইজনকে নিয়ে মা সিলেটে বাবার কাছে চলে আসেন। সেই থেকে সিলেট হয়ে উঠলো আমার শহর। দুই কাপড়ে আমার মা সংসার শুরু করেন আর আমাদের তিন ভাই বোনকে মানুষ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। সংসারের অনটনে হাত মেশিনে সেলাই করা উপার্জনের টাকায় সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। মায়ের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণাই আমার মনে যুগিয়েছে অসীম শক্তি।”

সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের অদম্য মেধাবী শিল্পী রাণী মোদক সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক অর্জন করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রীও অর্জন করেন। ছোট থেকেই তার লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হবেন। ছাত্র-ছাত্রিদের নিয়ে পাড়ি দেবেন স্বপ্নের পথ। কিন্তু স্থায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষার মধ্যেই বিরামহীন ধৈর্য ও শ্রমের ফলস্বরুপ মাত্র একবছরের প্রস্তুতি নিয়েই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসেস (BCS) পরীক্ষাতেও সফল হন তিনি।

সকলের কাছে আশীর্বাদ কামনা করে তিনি বিদায় মুহূর্তে জানান – আমি যেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারি। একজন সেবক হয়ে যেন দেশের ও দেশের মানুষের কাজে আসতে পারি সেই অশির্বাদ কামনা করি ।


“শিল্পী রাণী মোদক-র স্নাতকোত্তরের শিক্ষক সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব ও বীজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম. মাহফুল হক তাকে শুভ কামনা জানিয়ে এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে বলেন , “শিল্পী মোদক তার ভবিষ্যত কর্মজীবনে তার সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখবে এবং দেশের মানুষের কল্যানে নিয়োজিত করবে এই কামনা করি।”

খুব অল্প সময়েই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক হয়ে উঠেন শিল্পী মোদক। বিদায় অনুষ্ঠানে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী নিশাত ফারজানা তার প্রিয় শিক্ষককে উদ্দ্যেশ্য করে বলে – মানুষ এত স্বপ্নবাজ হতে পারে কিভাবে আপনাকে না দেখলে বুঝতামই না। এ সময় একই অনুষদের সৈয়দ জাহিদ বলে – একজন শিল্পী ম্যাম আমাদের স্বপ্ন, অনুপ্রেরণা, আমাদের গর্ব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও অনেকে শিল্পী রানী মোদকের এই সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার শুভাকাঙ্ক্ষী। জানা গেছে, শিল্পী রানী মোদক স্কুল কলেজের পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও ধরে রেখেছিল মেধার সর্বোচ্চ স্থান। শুধু লেখাপড়ায় নয় সংস্কৃতিতেও ছিল তার পদাচারণা।

৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বায়িত্ব পেয়েছেন পঞ্চগড় জেলায়।
শিল্পী রানী মোদক হোক শিকড়ে পড়ে থাকা, স্বপ্নবাজ সকল অসহায় বঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুকরন আদর্শ এক মানুষ।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর