অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।। রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ, ধামরাই

তথ্য অধিকার আইনে ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের অংশ বিশেষের যাচাই-বাছাই করে সরেজমিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য যাওয়া হয় রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) সাধারণ কর্মসূচীর আওতায় ১ম পর্যায়ে মোট দুইটি প্রকল্পে সরকারী বরাদ্দ আসে। সেনাইল পাকা রাস্তা জেকির বাড়ি হতে সালামের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মানের জন্য ৫.৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এবং দক্ষিণ খড়ারচর জুলমতের খেয়া-ঘাট হতে দক্ষিণ খড়ারচর বকেল এর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মানে ৮.০০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সরকারী বরাদ্দ হিসেবে আসে। এই প্রকল্পের সভাপতি রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম সামসুদ্দিন এর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে প্রকল্প দুইটির কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় তা সরেজমিন দেখা গেছে।

অপরদিকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর) সাধারণ কর্মসূচীর আওতায় ১ম পর্যায়ের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে মোট ৭টি প্রতিষ্ঠানে অর্থ বরাদ্দ হয়। সেগুলি হলো- আটিমাইঠান হাজেরা ইস্রাফিল মাদ্রাসা উন্নয়ন (বরাদ্দ ১,০৮,০০০/-), ফরিঙ্গা জামে মসজিদ উন্নয়ণ (৪৪,০০০/-), সেনাইল মাদ্রাসা মসজিদ উন্নয়ন (৮৬,৫৪২/-), চর সুঙ্গর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-), বহুতকুল সাধারণ পাঠাগার উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-), সুঙ্গর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-) এবং দক্ষিণ খড়ারচর ঈদগাহ মাঠ ভরাট (বরাদ্দ ৪৩,২৭১/-)। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে সরেজমিন গিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে উন্নয়ণ কাজ দেখা হয়।

অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় রোয়াইল ইউনিয়নে মোট তিনটি (০৩) প্রকল্পে সরকারী অর্থ বরাদ্দ হয়। এগুলি হলো- কৃষ্ণনগর সামাদের বাড়ি হতে কামারপাড়া রত্নার বাড়ি পর্যন্ত নতুন রাস্তা নির্মাণ (বরাদ্দ ৪,০০,০০০/-), দক্ষিণ খড়ারচর সাইফুলের দোকানের মোড় হতে পশ্চিম ভবনীপুর ইদ্রিস হাজীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মান (বরাদ্দ ৪,০০,০০০/-) এবং সুঙ্গর মল্লিকপাড়া খেয়াঘাট হতে সুঙ্গর মল্লিকপাড়া মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মান (বরাদ্দ ৪,০০,০০০/-)। সরেজমিন এই তিনটি প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে সরকারী বিধি অনুযায়ী কাজ না হবার বিষয়টি এই প্রতিবেদকের সামনে চলে আসে।

প্রসঙ্গত, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতার প্রকল্পগুলিতে হতদরিদ্র শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর নিয়ম। কিন্তু এই তিনটি প্রকল্প এলাকার বসবাসরত গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, অল্প কিছু শ্রমিকদের দিয়ে নামে মাত্র কাজ করানো হলেও, বেশীরভাগ কাজই ‘ভেকু’ (খনন যন্ত্র) দিয়ে করা হয়েছে। এবিষয়ে তারা এই প্রতিবেদকের নিকট ভিডিও বক্তব্যের মাধ্যমে এই ভেকু ব্যবহারের কথা বলেন। এছাড়াও রাস্তার দুই পাশে যেখান থেকে মাটি কেটে নেয়া হয়েছে, তা দেখেও বুঝা যায় কোদালের পরিবর্তে এখানে ভেকু ব্যবহার করা হয়েছে। তবে রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম সামসুদ্দিন ভেকু ব্যবহারের বিষয়টি অস্বীকার করেন। ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামকে সরকারী বিধির বিপরীতে গিয়ে খনন যন্ত্র ব্যবহার করে কাজ করার অনিয়মের ব্যাপারটি অবহিত করা হলে তিনি এই প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের কাজের সময়ে এব্যাপারটি লক্ষ্য রাখা হবে বলে জানান।

উল্লেখ্য, রোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রামপ্রসাদ ভৌমিককে প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে তার ইউপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি জানান, ধামরাইয়ের আসন্ন চেয়ারম্যান নির্বাচনে তিনি তার প্রার্থীর (পছন্দের) কাজ করছেন তাই আসতে পারবেন না। একজন সরকারী কর্মচারী হয়ে নিজ কর্মস্থলে ছুটি না নিয়ে সরাসরি পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার বিষয়টি স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর