এখনকার মতো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অতীতে দেখা যায়নি

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন(ইউজিসি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, এখনকার মতো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশে নিকট অতীতে দেখা যায়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান অথিতির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

বক্তব্যের শুরুতে তিনি যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের করায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুতে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সবাইকে নিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন।

এরপর তিনি লিখিত বক্তৃতায় বলেন, এখনকার মতো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশে নিকট অতীতে দেখা যায়নি। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েও বন্ধ করতে পারেনি যুদ্ধাপরাধের বিচার। পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের চাপ-কৌশলের বিপরীতে বিশ্বরাজনীতি দ্বিতীয় ধারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততাও শেখ হাসিনার অন্যতম রাজনৈতিক কৌশল। সব মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে শেখ হাসিনা আছেন চালকের আসনে। দেশ আছে সর্বাধিক স্থিতিশীলতায়।

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে জীবনধারণের যথেষ্ট উপকরণ ছিলনা। রিলিফ থেকে পাওয়া খাদ্য খেয়ে তখন আমাদের জীবন নির্বাহ করতে হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ, সবজি, চালসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে থাকছে উদ্বৃত্ত। রপ্তানি করা হচ্ছে বিশ্বে। এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে উচ্চতর শিক্ষা লাভ ও গবেষণার পাশাপাশি জাতির যোগ্যতম নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। নতুন জ্ঞানের ধারক হতে হবে। আজ যে জ্ঞান আধুনিক কাল সেটা নাও থাকতে পারে। আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় শিক্ষার্থীদের বিচরণ করতে হবে। মাদক ও জঙ্গিববাদ থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে।

প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, একজন শিক্ষার্থী শুধু তার নিজস্ব পাঠ্যক্রমের নির্দিষ্ট জ্ঞান আহরণের মধ্যে সচেষ্ট থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। জ্ঞানবিজ্ঞানের সাথে শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি, প্রযুক্তিসহ সামগ্রিক জ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী পরিপূর্ণ মানবরূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। উচ্চ শিক্ষার প্রাণ কেন্দ্র হল বিশ্ববিদ্যালয়। আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার মূল কথা হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, ইতিহাস থেকে জানা যায় মাতৃভাষার গুরুত্ব যাদের কাছে যত বেশি সে জাতি উন্নয়নের ধারায় তত বেশি অগ্রগামী। বর্তমান চীন, জাপান, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তবে বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার ব্যবহারও জানতে হবে। আমাদের এ কথাও স্মরণ রাখতে হবে যে- সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণে যখন কোন জাতি তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি বিসর্জন দেয় তখন তারা তাদের নিজস্ব জাতিসত্তা হারিয়ে ফেলে। এ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকতে হবে।

এর আগে লোক প্রশাসন বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক ড. জেবউননেছা এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার রহিমা কানিজ এর আহ্বানে প্রত্যেক অনুষদের ডিনবৃন্দ নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেন। উপাচার্যের মাধ্যমে নবীন শিক্ষার্থীরা শপথ গ্রহণ করে।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আমির হোসেন, উপউপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোঃ নূরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মঞ্জুরুল হক, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান, ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার, বিভিন্ন অনুষদের ডীনবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, নবাগত ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর