মৃত্যুর আগে যা বলে গিয়েছেন নুসরাত

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি মারা গেছেন। বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান রাফি। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। লাইফ সাপোর্টও তেমন কাজ করছিল না। এরপর চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

সর্বশেষ সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দেখা করতে গেলে ভাইয়ের কাছে বিভিন্ন আকুতি জানান দগ্ধ নুসরাত। এ সময় ওই ছাত্রীর মা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

নুসরাত বলেন, ‘যারা আমার গায়ে আগুন দিয়েছে, তাদের অনেক পরিচিত মনে হয়েছে। তবে আমি তাদের মুখটা মনে করতে পারছি না। আমাকে একটু চিন্তা করতে দেন ভাই। আমি চিন্তা করে সব বলমু।’

নুসরাত আরও বলেন, ‘ভাই, আমি এখানে চিকিৎসায় বাঁচবো না। তোরা যেভাবে পারিস প্রয়োজনে আমাকে বাইরে নিয়ে যা’

ওই মাদ্রাসাছাত্রী বলেন, ‘ভাই, আমার যা কিছু হয়ে যাক, আমার যত কিছু হয়ে যাক। অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও তার সহযোগী সবাই যারা আমার গায়ে আগুন দিয়েছে তাদের যেন যথাযথ শাস্তি হয়।’

যেকোনো মুহূর্তে বোনের যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে জানিয়ে নুসরাতের ভাই সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে যে চিকিৎসক আমার বোনকে দেখছেন তিনি জানিয়েছেন, ছোট ভাই দেখো- এই হাসপাতালে আমি চার বছর ধরে চিকিৎসা দেই। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই হাসপাতালে ৭০ শতাংশ পোড়া অবস্থায় যত রোগী এসেছে, তারা এখান থেকে কেউ বেঁচে ফিরে যেতে পারেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তোমার আপুর শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এখন আবার ৮৫ শতাংশ বলছেন ওনারা। তাহলে চিন্তা কর, ইমপসিবল, কখনো সম্ভব না। এখন তোমরা যদি পারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে ওনাকে দ্রুত দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।’

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাহ ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন- এমন অভিযোগ এনে ছাত্রীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ তাৎক্ষণিক অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।

ওই ঘটনায় গত শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যায় নুসরাত জাহান রাফি। পরে সেখান থেকে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর চারজন বোরকা পরিহিত তাকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় এক নারীসহ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে ও ৪ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আজ প্রধান অভিযুক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদৌল্লাহ’র রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর