নওগাঁয় ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে তল্লাসির নামে ছিনতাইয়ের অভিযোগ

নওগাঁ শহরের চকদেব নুনিয়াপাড়া থেকে অর্চনা প্রসাদ (৩৮) নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী মহিলাকে মাদক ব্যবসার অভিযোগ দিয়ে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঘটনাস্থল থেকে তার মেয়ের জামাই রমেন চৌহানকে মাদকসেবী হিসেবে আটক করা হয়েছে। এসময় অর্চনা প্রসাদ ও প্রতিবেশী রিনা রানীর বাড়ি তল্লাসির নামে প্রায় দেড় লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (৩০ মার্চ) রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অর্চনা প্রসাদ মহল্লার মৃত লিপু প্রসাদের স্ত্রী এবং রিনা রানী দিপু প্রসাদের স্ত্রী। এ বিষয়ে নওগাঁ পুলিশ সুপার বরাবর গত ৭ এপ্রিল ভুক্তভোগী পরিবার পৃথক দুটি অভিযোগ দিয়েছে। স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ছয় বছর আগে অর্চনা প্রসাদের স্বামী মারা গেছেন। সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে।

জীবন জীবিকার তাগিদে কাপড় ব্যবসা শুরু করেন অর্চনা প্রসাদ। গত শনিবার বিভিন্ন স্থানে কাপড় বিক্রি করে রাত ৯টার দিকে তিনি বাড়িতে আসলে সাথে সাথে ডিবিও প্রবেশ করে। এসময় ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর হান্নান মাহমুদ এর নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের এসআই নজরুল ও এএসআই শাহাদত সহ কয়েকজন ডিবি পুলিশ নারী পুলিশ ছাড়াই অর্চনা প্রসাদের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী এ অভিযান পরিচালনা করে কোন মাদক না পেয়ে বেরিয়ে যায়। দুই মিনিট পর বাজারের একটি ব্যাগ নিয়ে পুলিশের সোর্সসহ তারা ফিরে এসে আবারও ঘরে প্রবেশ করে। এরপর ঘরের আলমিরা ভেঙে ভেতর থেকে চার বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয় মর্মে অর্চনা প্রসাদকে আটক করা হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবী অর্চনা প্রসাদ সিরাজগঞ্জ হাটে কাপড় উত্তোলন করার জন্য স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ২ লাখ টাকা উত্তোলন করে। সেখান থেকে পাওনাদারকে প্রায় ১ লাখ টাকা দেয়া হয়।

আনুষঙ্গিক ২০ হাজার টাকা খরচ করে বাঁকী ৮০ হাজার টাকা আলমারীতে রাখা ছিল। এছাড়া সেইদিনের কাপড় বিক্রি করে আসা প্রায় ৩৭হাজার টাকা এবং রমেন চৌহানের কাছে থাকা ৭ হাজার ৪শ টাকাসহ প্রায় দেড় লাখ টাকা ডিবি পুলিশেরা ছিনতাই করে নিয়ে নেয়। এছাড়া একই সময়ে প্রতিবেশী রিনা রানীর বাড়িতে তল্লাসির সময় চাবি নিয়ে আলমিরা খুলে সেখানে রাখা ২০ হাজার টাকা দেখতে পেয়ে পুলিশরা নিয়ে নেয়। এছাড়া মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে আরো ৪০ হাজার টাকা দাবী করেন বলে অভিযোগ করেন রিনা রানী। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায় দীর্ঘদিন থেকে রিনা রানী মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এবং পুলিশ ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার তাকে আটক করেছে। স্থানীয় প্রতিবেশী সোহরাব আলম নামে এক ব্যক্তি বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর অর্চনা প্রসাদ কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি কোন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত না। কিন্তু ডিবি পুলিশ তার বাড়িতে এসে তল্লাশি করে মাদক উদ্ধার করে ধরে নিয়ে গেছে। অর্চনা প্রসাদের মেয়ে অন্তরা রানী বলেন, ডিবি পুলিশ যখন মা’র বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে তখন আমি জানতে পেরে মা’র বাড়িতে যায়। আমার স্বামীকেও (রমেন চৌহান) ফোন করে ডেকে নিয়। এসময় ডিবি পুলিশ আমার স্বামীকেও মাদকসেবী আখ্যায়িত করে তাকে আটক করে।

পরে এক মহিলা পুলিশকে ডেকে মাকে ধরে নিয়ে যায়। আমার স্বামীকে ছাড়তে ডিবি পুলিশ ২০ হাজার টাকা এবং মাকে ছাড়তে আরও ১ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু আমরা টাকা দিতে অস্বৃকীতি জানাই। অন্যায় ভাবে আমার মা এবং স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে ডিবি পুলিশ। আমরা সত্য উদঘাটন করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর হান্নান মাহমুদ বলেন, আমার নেতৃত্বেই ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অর্চনা প্রসাদ কাপড় ব্যবসার আড়ালে মাদকের ব্যবসা করতেন। মহিলা পুলিশ দিয়ে তার শরীর তল্লাশি করে ফেন্সিডিল পাওয়া যায়। তবে টাকা নেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম সামছুদ্দিন বলেন, ওইদিন স্বাক্ষী দিতে ফরিদপুর জেলায় গিয়েছিলাম। তবে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর হান্নান মাহমুদ সহ কয়েকজন ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে শুনেছি। নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর