পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক টোল আদায় শুরু হয়েছে আজ (বুধবার)। সেতু সচিব মো. মঞ্জুর হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেকট্রনিক টোল দিয়ে এ সেতু পার হন।

তিন মাস পরীক্ষামূলক এ টোল আদায় কার্যক্রম চলবে। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা সারিয়ে নিয়মিত কার্যক্রম চালু করা হবে।

এর আগে, মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাত ১২টা থেকে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমের (ইটিসিএস) কার্যক্রম পরীক্ষা করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) পদ্ধতিতে টোল আদায়ে দুপাড়ে একটি করে স্মাট বুথ আছে। এই পদ্ধতির জন্য রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ি টোল প্লাজার সামনে আসতেই রোবটিক ক্যামেরা গাড়ি শনাক্ত করে। নির্ধারিত টোল আদায় করলে স্ক্রিনে দেখা যাবে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, দুই পাড়েরই ১ নম্বর বুথে চালু করা হয়েছে শুধু আরএফআইডি পদ্ধতি। আর দুপাড়ের ২ নম্বর বুথে হাইব্রিড। এই বুথে তিনটি পদ্ধতি আরএফআইডি, টাচ এন্ড গো এবং ক্যাশ চালু করা হয়েছে। আর দুপাড়ের ৩ থেকে ৭ নম্বর – পাঁচটি বুথে টাচ অ্যান্ড গো এবং ক্যাশ পদ্ধতি চালু রয়েছে। কার্ডে ব্যালেন্স থাকলে টাচে ক্যাশলেস টোল দেয়া যাবে। এজন্য এ বুথগুলোর পাশে গাড়ির উচ্চতা বিবেচনা করে তিন রকম উচ্চতায় কার্ড পাঞ্চ করার মেশিন স্থাপন করা হয়েছ। এ ৫টি বুথে কেউ চাইলে নগদেও টোল দিতে পারবেন।

একইভাবে জাজিরা প্রান্তের ৮ ও ৯ এবং মাওয়া প্রান্তের ৮ নম্বর বুথে মোটরসাইকেলের জন্য নির্দিষ্ট করে আগের মতোই ম্যানুয়ালি কম্পিউটারে টোল আদায় চালু রাখা হয়েছে। সংক্রিয়ভাবে টোল আদায় শুরু হওয়ায় দুপাড়ে দুটি বুথ বাড়ানো হয়েছে। তাই ১৫টির স্থলে এখন সেতুর দুপাড়ের প্রবেশ পথে ১৭টি টোল বুথ চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায়ের সক্ষমতা রয়েছে। এই বুথগুলোর ক্যামেরায় গাড়ির নম্বর আসতেই বিআরটি-এর সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে স্ক্রিনে টোলের পরিমাণ দেখা যাবে।

নতুন এ দুই পদ্ধতি ব্যবহারে প্লাজা অতিক্রমে কোনো সময় অপচয় হবে না। তবে সেতু ব্যবহারকারী যানগুলো এ কার্ড বা রেজিস্ট্রেশন করা না থাকায় এর সুফল এখনো পুরোপুরি পাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের উত্তর থানার কাছে বুথ চালু করা হচ্ছে; এখান থেকেই কার্ড গ্রহণ এবং রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

তিনি আরও জানান, ৪ জুন পর্যন্ত কম্পিউটার কালেক্টর পদ্ধতিতে ম্যানুয়ালি টোল আদায় করা হয়। নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক টোল আদায় প্রত্যক্ষ করতে সেতু সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পরিদর্শনে আসেন।

তিনি জানান, মাওয়া প্রান্তে ১ নম্বর বুথে আরএফআইডি, ২ নম্বর বুথে হাইব্রিড অর্থাৎ আরএফআইডি, টাচ অ্যান্ড গো এবং ক্যাশ তিন পদ্ধতি, আর ৩ থেকে ৭ নম্বর বুথে থাকবে টাচ অ্যান্ড গো এবং ক্যাশ পদ্ধতি। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল আদায়ের জন্য কার্ড এবং রেজিস্ট্রেশনের কাজ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ‘একপে’ করার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যানবাহনের সামনে ড্যাশবোর্ডে আরএফআইডি নম্বর সংযুক্ত হবে ব্যাংক হিসাবে। এ আইডিতে অগ্রিম টাকাও রিচার্জ করা যাবে। বিশ্বের জনপ্রিয় দুই পদ্ধতিতে টোল আদায়ের এ পদ্ধতি শুরুর পর কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করবে। এ টোল পদ্ধতিতে যানবাহনকে অপেক্ষায় থাকতে হবে না।

এদিকে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সেতু ব্যবহাকারীরা। তারা দ্রুত কার্ড সরবরাহ এবং রেজিস্ট্রেশন বুথ চালুর দাবি জানান।

বার্তা বাজার/জে আই