কেউ মুক্তিযোদ্ধা আবার কেউবা জনপ্রতিনিধি। তবে বয়সের ভারে অনেকেই ন্যুব্জ প্রায়। শিশু থেকেই নানা খেলাধুলার মাধ্যমে সবাই বড় হয়। একটা বয়স পর্যন্ত অনেকেই খেলেন। এরপর ছেড়ে দেন। কিন্তু সেসব খেলা ছেড়ে দেওয়ার বহু বছর পর বৃদ্ধ বয়সে এসে আবার ফুটবল খেলায় মেতে উঠলেন তারা।

 

রোববার (২ জুলাই) বিকালে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমির সবুজ মাঠ চত্বরে এ প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ব্যতিক্রমধর্মী ও রোমাঞ্চকর এ ফুটবল ম্যাচে সতীর্থ ৭১ বনাম চেয়ারম্যান একাদশ নামে দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে খেলোয়াড়রা মাঠে নামেন।

 

মনে হয় যেন সেই নবীন বয়সের খেলায় মেতে উঠেছে তারা। কিন্তু বয়সের সঙ্গে খেলার মিল না থাকলেও রেফারির বাঁশির শব্দ আর ফুটবলের পিছু ছাড়ছেন না কেউই। একটি বল যেন তাদের বড় সম্পদ। মনোবল থাকলেও শারীরিক অক্ষমতার কারণে যৌবনকালের মতো ফুটবলের সঙ্গে দৌঁড়াতে পারছে না। তারপরেও চেষ্টা…। বলের সঙ্গে পা রাখতেই পড়ে যাচ্ছে, তারপরেও থেমে নেই। নির্ভয়ই ছুটে চলছে মাঠে, বলটি নিয়ে গোল দিতে যেতেই হবে। অবশেষে খেলাটি ২-২ গোলে ড্র হয়।

 

এদিকে ব্যতিক্রমধর্মী এ খেলা দেখতে কাঞ্চন একাডেমির সবুজ চত্বর মাঠের চারিপাশে উৎসুক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আনন্দকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য খেলা দেখে বাদ্য-বাজনার তালে তালে উৎফুল্ল হাসি আর মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে খেলোয়ারদের উৎসাহ দেন দর্শকরা।

 

ব্যতীক্রমধর্মী এ খেলায় খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান, বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান মঈনুল ইসলাম মোস্তাক, আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ দেলোয়ার হোসেন, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান বেলায়েত হোসেন, পাঁচুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মিজানুর রহমান, বেদন শাহ্ হজ্জ কাফেলার চেয়ারম্যান কবির আহমেদ লিঞ্জু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য শেখ তাহিদুর রহমান মুক্ত, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম, শেখর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ, আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম, জেলা পরিষদের সদস্য ফারুক হোসেন ও ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবর প্রমুখ।

 

এমন ব্যতীক্রমধর্মী খেলার আয়োজক সতীর্থ ৭১ নামের একটি সংগঠন। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমিতে যারা এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তাদেরই উদ্যোগে ২০০৫ সালে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্যকে জাগ্রত করার প্রয়াসে এবং এই চেতনাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছানোর ব্রত নিয়ে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়।

 

এমন আয়োজনের বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান টুনু জানান, ‘ফুটবল খেলা গ্রামীণ ঐতিহ্য। বয়সের ভারে ক্রমান্বয়ে এ খেলা থেকে এড়িয়ে যেতে হয়। বৃদ্ধ বয়সে এসে এ খেলার প্রতি মনোনিবেশ থাকলেও শরীরের সঙ্গে মানায় না। তবে আমাদের এই ফুটবল ম্যাচ সত্যিকার অর্থে ব্যতিক্রম। ফলে বয়স্কদের যেমন মানসিকতার বিকাশ ঘটছে তেমনি একঘেঁয়েমিও মনোভাবটাও কমছে।’

 

 

ই.এক্স/ও.আর/বার্তা বাজার