সাংবাদিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে ‘টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রীদের হেনস্তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে ট্রেনে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে সিটের উপর দাড়িয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ওই শিক্ষার্থী। এছাড়া পোড়াদহ স্টেশনে সেই শিক্ষার্থীর পরিচয় নিশ্চিতে রেলওয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম আব্দুস সালাম। তিনি বশেমুরবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এবং দৈনিক সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্য।

শুক্রবার সকালে গোপালগঞ্জের গোবরা স্টেশন থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈদের ছুটির কারণে অনেক শিক্ষার্থী টিকিট পায়নি। ফলে, টিকেট বাদেই ঈদ যাত্রায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেন তারা। পথিমধ্যে টিটিই ও রেলওয়ে পুলিশ টিকিট চেক করতে আসে। এসময় টিটিই আসার পূর্বে সালাম নামে এক ব্যক্তি ট্রেনের যাত্রীদের কাছ থেকে টিকিট চেক করে। অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ায় টিকিট না পেয়ে অনেকে যাত্রী বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমন করে। ফলে আব্দুস সালাম সেসকল যাত্রীদের থেকে টিকিটের বিষয়ে কৈফিয়ত জানতে চায়। একইসাথে যাত্রীদের থেকে মূল ভাড়া থেকে দ্বিগুণ ভাড়া জরিমানা করানোর জন্য সাংবাদিক পরিচয়ে টিটিকে নির্দেশ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এছাড়া অভিযোগ পাওয়া যায়, যেসকল যাত্রীর টিকিট ছিল, তাদের টিকিট একাধিকবার চেক করে সালাম। তবে ট্রেনে টিকিট দেখার জন্য দায়িত্বরত টিটিই থাকলেও অযাচিতভাবে আব্দুস সালাম সাংবাদিক পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের টিকিট দেখেন। এবং অনেক যাত্রীদের হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, নিজেই টিটিক না কিনে যাত্রীদের টিকিট চেক করা এবং টিটিই সাথে সম্পর্ক তৈরি করে অন্য যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন ঐ সাংবাদিক।

একাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগী এজাজ আহমেদ বলেন, আমার কাছে টিকিট থাকা সত্বেও দুইবার টিকিট চেক করে সালাম। আমার সামনে আরো অনেক শিক্ষার্থীকে এভাবে হেনস্তার শিকার করে সে। যে শিক্ষার্থীদের টিকিট নেই, তাদরকে জরিমানা করায় সে। এমনকি, টিটিই এক-রকম জরিমানা করে, সালাম সেটা নিজের মত করে আরো বাড়িয়ে দেয়।

ট্রেনের বিষয়ে জানতে চাইলে আরিফ ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ওইদিন আমি ‘গ’ বগির টিকিট কেটেছিলাম। ট্রেন চলার কিছুক্ষণ পর ঐ ব্যক্তি আমার কাছে এসে টিকিট চেক করে। এবং টিকিট দেখাতে বাধ্যও করে। প্রথমে ওনার কথাবার্তার ধরন দেখে মনে করেছিলাম ম্যাজিস্ট্রেট হবে কিন্তু পরে জানতে পারি ভুয়া।

এদিকে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ডজন খানেক শিক্ষার্থী এ ঘটনায় হেনস্তার স্বীকার হয়েছেন বলে জানা যায়। এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও ঐ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন।

শিক্ষার্থী ও পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হয়ে ট্রেনের টিকিট চেক করার কোনো অধিকার রাখেন কিনা! এ বিষয়ে সালামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো টিকিট দেখতে চাইনি। ট্রেনে থাকা সকল শিক্ষার্থী আমাকে চাপানোর জন্য আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে।

পোড়াদহ স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর পর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হলে সালামকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসময় পুলিশ তাকে ক্ষমা করে দেন বলে জানা যায়। তবে সালাম বলেন, পুলিশের সাথে আমার পরিচয় ছিলো। পোড়াদহ নেমে আমি চা খাচ্ছিলাম, এসময় পুলিশ আসে৷ এবং তাদের সাথে আমার পরিচয় ছিলো। তাই তাদের সাথে কথাবার্তা বলি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী প্রক্টর বরাবর মৌখিক অভিযোগ করেছেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে প্রক্টর ড. মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, এক শিক্ষার্থী মুঠোফোনে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কমেন্ট দেখলাম। অনেক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়েছে দেখলাম। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।

বার্তাবাজার/এম আই