গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর এবং সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত আহ্ববায়ক রাশেদ খানকে বহিস্কার করেছেন দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া। এরই প্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন নুরুল হক নুর, বলেছেন, মাতাল হয়ে সে কি বললো তাতে কিছু আসে যায় না।

মঙ্গলবার (২০ জুন) রাত ৯টার দিকে তার বহিস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে বার্তা বাজারকে একথা বলেন তিনি।

দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াকে অভিযোগ করে তিনি জানান, গণঅধিকার পরিষদের ১২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ২১ জনকেও রেজা কিবরিয়া ভালোভাবে চিনে না, নামও বলতে পারবে না। ৫৪ জেলা কমিটির ১০ জনকে চিনে কিনা সন্দেহ!

নুর বলেন, গত পৌনে দুই বছরে রেজা কিবরিয়া সংগঠনে পৌনে ২ লাখ টাকাও খরচ করেননি। ২০ টা প্রোগ্রামেও ছিলো না।

সংগঠনে তার কোন ভূমিকা নেই উল্লেখ করে নুর জানান, গণঅধিকার পরিষদ কিংবা গণঅধিকার পরিষদের অঙ্গসংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ, পেশাজীবি অধিকার পরিষদ গঠনে রেজা কিবরিয়ার কোন ভূমিকা নাই। সব কিছু গুছিয়ে আমরাই তাকে একটা গুছানো প্ল্যাটফর্মে এনেছিলাম। সুতরাং গণঅধিকার পরিষদের সংগঠকদের কাউকে বহিষ্কার করা বা গণঅধিকার পরিষদকে বিভক্ত করার যোগ্যতা রেজা কিবরিয়া রাখে না।

তিনি বলেন, বিদেশে বসে মাতাল হয়ে সে কি প্রেসরিলিজ দিলো তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। আমরা কেন্দ্রীয় মিটিং ডেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করেছি, যোগ করেন নুর।

উল্লেখ্য, গত রোববার সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৫৫ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার বাসার ছাদে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠক বসে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।

দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বৈঠকে আসেন সাড়ে ৮টার দিকে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, ৭টার বৈঠকে কেন সদস্য সচিব সাড়ে ৮টায় উপস্থিত হবেন? এর পর থেকেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলতে থাকে। যার রেশ থাকে শেষ পর্যন্ত। রাত ৯টা নাগাদ এক পর্যায়ে রাগ করে উঠে বাসায় চলে যান রেজা কিবরিয়া।

পরবর্তীতে এ ঘটনা সোমবার (১৯ জুন) রাতে পাল্টাপালি বিবৃতি দেন ড. রেজা কিবরিয়া এবং নুরুল হক নুর।

সোমবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের প্যাডে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, রোববার (১৮ জুন) তার সভাপতিত্বে জরুরি সভায় দলীয় শৃঙ্খলার স্বার্থে সদস্য সচিবের কাছে প্রবাসী অধিকার পরিষদের কমিটি পুনর্গঠন, এরই মধ্যে সংগৃহীত অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক, ইসরায়েলের বিতর্কিত মোসাদ সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক, দলীয় নেতাদের নিয়ে অসত্য সংবাদ প্রচারের জন্য ভিপি নুরকে দায়ী করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তিনি (রেজা) সভাস্থল ত্যাগ করেন।

রেজা কিবরিয়ার এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর নিজের ফেসবুক পেজে ভিপি নুর পাল্টা অভিযোগ তুলে বিবৃতি দেন।

পাল্টা বিবৃতিতে নুরুল হক নুর লেখেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের রেজার অভিযোগ, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় জনৈক মাসুদ সংস্থার সঙ্গে নুর বৈঠক করেছেন। আর্থিক বিষয়ে বা এনায়েত করিমের বিএনপিকে ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আবদুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে নিতে চান রেজা কিবরিয়া। এ জন্য সরকারবিরোধী অনুষ্ঠানের নামে ব্যাংকক, কাঠমান্ডুতে একাধিকবার বৈঠকে অংশ নিয়েছেন এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং সর্বশেষ ইনসাফের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসব বিষয়ে রোববারের বৈঠকে জবাবদিহিতা চাওয়া হলে সদুত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করে রেজা কিবরিয়া বাসায় ঢুকে আর ফেরেননি।

ভিপি নুর আরও লিখেছেন, রেজা কিবরিয়া আহ্বায়ক হয়েও দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। টাকার লোভে তিনি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর।

বার্তাবাজার/এম আই