রংপুরের মিঠাপুকুরে ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক মাদ্রাসা ছাত্রীর সাথে অসামাজিক কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান লেবু মিয়া (৩২) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ। সে উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের এন্দা মিয়ার ছেলে। ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসা ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের মিয়ারহাট নামক বাজারে ধর্ষক লেবু মিয়ার একটি কসমেটিক্স সহ কম্পিউটারের দোকান আছে। ওই বাজারের পাশে একটি প্রাইভেট সেন্টারে পড়াশোনা করতে যেতেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ওই কিশোরী মেয়ে। ১২ বছর বয়সী ওই ছাত্রী প্রায় ৩ মাস আগে প্রাইভেট পড়া শেষে বান্ধবীদের সাথে লেবু মিয়ার কসমেটিক্সের দোকানে গেলে দোকানি লেবুর ওই ছাত্রীর উপর কু-নজর পড়ে। সে সুযোগ বুঝে মেয়েটিকে তার দোকানের ভিতরে ডেকে নিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয় এবং সে ঘটনার ভিডিও ধারণ করে রাখে।

এরপর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে আবারও তার দোকানে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং আবারও ভিডিও ধারণ করে রাখে। এভাবেই ওই কিশোরীকে ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। সর্বশেষ ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিকেলে ওই ছাত্রী প্রাইভেট শেষে বাড়ি ফেরার পথে লেবু ওই কিশোরীর ভিডিও ডিলেট করার আশ্বাস দিয়ে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সেদিন প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে সারারাত ধরে ওই ছাত্রীর উপর নির্মম নির্যাতন চালায় ধর্ষক লেবু।

এদিকে মেয়েকে না পেয়ে সারারাত ধরে খুজতে থাকে তার স্বজনরা। বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে খোজাখুজি করেও না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লে পরদিন সকালে বিকল্প পথে ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে তার দাদা বাড়িতে পৌঁছে দেয় ধর্ষক লেবু। এরপর নির্যাতনের শিকার শিশুটির কাছে সারারাত কোথায় ছিল জানতে চাইলে মেয়েটি পরিবারের লোকজনকে সবকিছু খুলে বলে। পরে মিঠাপুকুর থানায় মামলা করা হলে ধর্ষক লেবু মিয়াকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, মেয়েটি অবুঝ সবেমাত্র ৭ম শ্রেণিতে পড়ে। তার সাথে বাবার বয়সি লেবু মিয়া যে নির্যাতন চালিয়েছে তা অমানবিক। তার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ যাতে কেউ আর এমন জঘন্য কাজ করার সাহস না পায়। একটা দোকানদার হয়েও যদি এমন কাজ করে তাহলে আমাদের মেয়েরা নিরাপদ কোথায়! আমরা ধর্ষক লেবুর কঠিন শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করার দাবি জানাই।

ছাত্রীর বাবা জানান, একজন বাবা হয়ে মেয়ের এমন ঘটনা আমার ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে। আমার মেয়ে ছোট অবুঝ আমি এর কঠিন বিচার চাই। মামলা করার পর লেবুর লোকজন নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমাদের গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। আমরা গরীব ন্যায্য বিচারের জন্য পুলিশসহ সকলের সহযোগিতা চাই।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বিষয়টি জানার সাথে সাথেই লেবু মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। মেয়েটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।

বার্তা বাজার/জে আই