জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েকমাস। দেশজুড়ে দামামা বাজছে নির্বাচনের। অন্যান্য আসনের মত নির্বাচনের হাওয়ায় দুলছে দিনাজপুর-৬ আসন। মাঠে যেমন তেমন, তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় গরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই দিনাজপুর-৬ আসন দীর্ঘদিন থেকেই পরিচিত বিএনপি-জামায়াতের আসন নামে।

তবে গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত আসনটি নিজেদের দখলে রেখেছে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগ। মাঝে দীর্ঘসময় ঘুমঘুম ভাবে চললেও, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরব হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত। পছন্দের সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।

সর্বশেষ গত ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি উপজেলার ১৬৬টি কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা প্রতীকে ২৮ লাখ ১ হাজার ৮৯১ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শিবলী সাদিক এবং ধানের শীর্ষ প্রতীকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ারুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৬৯ হাজার ৭৬৯ ভোট। এছাড়াও হাতপাখা প্রতীকে নুর আলম সিদ্দিক ২ হাজার ৯০৬ এবং আম প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রাথী শাহিদা খাতুন ৫৭০ ভোট পেয়েছিলেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও দলীয় বিভিন্ন কোন্দল পিছু ছাড়ছে না আওয়ামী লীগের। দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দিনাজপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সাথে এই আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের কোন্দল একাধিকবার প্রকাশ্যে এসেছে। এসবের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ আসনটি থেকে এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় ৬ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা, সাবেক সংসদ সদস্য আজিজুর রহমান চৌধুরী, নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান, বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মন্ডল এবং ভারপাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পারভেজ কবীর।

এখনও পর্যন্ত প্রচারণায় এগিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। সরকারী এবং দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে তিনি দোয়া যাচ্ছেন এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড জনগণের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কারা মনোনয়ন চাইবেন এবং দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতের পরশ কার মাথায় পড়বে, তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকমাস।

দিনাজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দলের দিক থেকে আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি আছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বিবেচনায় দিনাজপুরের সব কয়টি আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করবে বলে আশা রাখছি।’

অপরদিকে প্রধান আরেক রাজনৈতিক দল বিএনপিতে কোন্দল জোট নিয়ে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই আসন থেকে ইতিপূর্বের জাতীয় নির্বাচন গুলোতে জামায়াত থেকে প্রার্থী দিলেও, এবার নিজেদের দলের নেতাকে মনোনয়ন দিতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জোর তাগিদ দিচ্ছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করলে আসনটি থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হাসান। তার পক্ষে মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় নেতারা। উপজেলা পর্যায়ে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তার উপস্থিতি চোখে পড়ার মত।

এদিকে জোট থেকে জামায়াতের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিক বা না দিক! সেই অপেক্ষায় প্রচারণায় পিছিয়ে নেই জামায়াত। প্রকাশ্য কার্যক্রম না থাকলেও, ঘরোয়া ভাবে তারাও চালিয়ে যাচ্ছে জোর প্রচারণা। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে দলটির নেতাকর্মীরা ঘরোয়া বৈঠক করছেন। নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে সাধারণ মানুষের কাছে দোয়া যাচ্ছে তারা। জোট থেকে ইতিপূর্বে জামায়াতের দিনাজপুর (দক্ষিণ) সাংগঠনিক জেলা আমির আনোয়ারুল ইসলাম মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে জোট থেকে মনোনয়ন না দিলেও একক ভাবে তিনিই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন বলে নিশ্চিত করছে স্থানীয় জামায়াত নেতারা।

নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই আসনে তাদের বড় একটি ভোট ব্যাংক আছে। সে কারণেই জোট শরিক হিসেবে ইতিপূর্বে তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহম্মেদ কচি বলেন, ‘হাই কমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। অবৈধ সরকারের পতত ঘটাতে এবং নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের দলীয় কর্মসূচি চলমান আছে। নির্বাচন ঘিরে আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া আছে।’

দিনাজপুর (দক্ষিণ) সাংগঠনিক জেলা জামায়াতের আমির এবং সম্ভাব্য প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যদি জোট ভিত্তিক নির্বাচন হয়, তবে বিএনপির’ও অধিকাংশ নেতাকর্মী চায় যে আমি যেন মনোনয়ন পাই। তবে যদি জোট ভিত্তিক নির্বাচন না হয়, সেক্ষেত্রে সাংগঠনিক ভাবে আমি নির্বাচন করবো বলে আশা রাখছি। বাকিটা আমাদের দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে।’

বার্তাবাজার/এম আই