নিজেদের শক্তি জানান দিতে মাঠে নামছে জামায়াতে ইসলামী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে দলটি। সোমবার রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, জাতীয় নেতাদের ও ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাসহ জনগনের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে’ এ কর্মসূচি পালন করা হবে। পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়েও বিক্ষাভ মিছিল করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এসব কর্মসূচি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে এবার পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চাইবে দলটি। একই সঙ্গে কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জেলার কার্যালয় খুলে দেওয়ারও দাবি জানাবে তারা। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন এসব তথ্য।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘দশ দফার ভেতরেই লেখা আছে সরকারের পদতাগ ও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন। এটাই এক দফা। যেহেতু সময় বেশি নেই। মূল দাবি আদায়ে সামনে কর্মসূচি ধীরে ধীরে আরও বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব কার্যালয় খুলে দিতে হবে। কারণ অন্যায়ভাবে কার্যালয়গুলো বন্ধ করে রেখেছে। নেতাকর্মীরা গেলেই গ্রেফতার করছে। এটা বড় ধরনের জুলুম।’

মঙ্গলবার কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের দায়িত্বশীলদের নিয়ে এক সমাবেশেও জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, ‘খুব শিগগিরই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। বর্তমান দেশে কোনো মানবাধিকার, আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার ও ন্যায়বিচার বলতে কিছু নেই। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলন বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য এক দফা সরকার পতন আন্দোলন শুরু হবে।’ সর্বস্তরের জনশক্তিকে আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য আহ্বানও জানান তিনি।

বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো এখন পৃথকভাবে একক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে। কার্যত ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক শিথিল। এখন তা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর যে যুগপৎ আন্দোলনের শুরুর দিকের দুটি কর্মসূচিতে জামায়াতের অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি দলটি। এক্ষেত্রে যুগপতের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নেতাকর্মীদের আটক ও গ্রেফতার এবং কেন্দ্রীয় আমিরের গ্রেফতারের পর বিএনপি থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।

এরপর থেকে এককভাবে জামায়াতও কর্মসূচি পালন করে আসছে। তবে বেশ কয়েক দিন বিরতির পর আবারও রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। সোমবার বেলা সাড়ে ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা চেয়ে ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আবেদনও করেছে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। আবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়, বিজয়নগর ও নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হবে।

সূত্রমতে, ঢাকার বিক্ষোভ সমাবেশে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে মহানগরের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় বৈঠকও করছেন। দলটির নেতারা আশা করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ অনুমতি দেবে। না দিলেও তাদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করারও প্রস্তুতি রয়েছে।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ  বলেন, অনুমতির বিষয়ে পুলিশ এখনো জানায়নি। আমরা আশা করছি কর্মসূচি পালনে অনুমতি দেবে। এ কর্মসূচি হবে শুধু ঢাকায়। এ কর্মসূচি নিয়ে এখন নেতারা ব্যস্ত রয়েছেন। নতুন কর্মসূচির বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।

জামায়াতের ঘোষিত কর্মসূচির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শুক্রবার ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জামায়াতের ৫ তারিখের (সোমবার) কর্মসূচি বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, বিষয়টি দেখছি।

তবে হঠাৎ করে জামায়াতের মাঠে নামা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জনও রয়েছে। তাদের তৎপরতার ওপর বিএনপিও নজর রাখছে। বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা আন্দোলন করছেন। যে কারণে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ গাজীপুরসহ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনেক ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর পদে জামায়াত ঠিকই প্রার্থী দিয়েছে।

জামায়াতের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি বিএনপি নেতারাও সন্দেহের চোখে দেখছে। জামায়াত আসলেই আন্দোলনে থাকবে কিনা, নাকি শেষ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে যাবে-এ বিষয়টি নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে বিএনপি।

অবশ্য জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, জামায়াত এ সরকারের অধীন নির্বাচনে যাবে না, এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। স্থানীয়ভাবে কেউ হয়তো কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়েছেন, সম্মতি ছাড়াই। তারা আবার এমন পর্যায়ের নন যে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এজন্য বিষয়টি নিয়ে তারা মাথা ঘামাচ্ছেন না।’

তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জামায়াতও কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সুতরাং জামায়াতের নেতাকর্মীরা এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আপাতত ঢাকাসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলায় কর্মসূচি দেওয়া হবে। এসব কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এর মাধ্যমে সরকারের আচরণ কি তা বোঝার চেষ্টা করব। সময়-সুযোগমতো এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বার্তা বাজার/জে আই