কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ১১নং রাজামেহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন সরকারের পদটি শূন্য করা হয়েছে দাবি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্যাডে একটি ভুয়া চিঠি ছড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি চক্র। চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ছড়ানো হচ্ছে। তবে চিঠিটি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বুধবার কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার কয়েকজন নাগরিক চিঠিটির কপি দিয়ে এর সত্যতা সম্পর্কে জানতে চান। ওই চিঠিতে দেখা যায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের স্বাক্ষর।

এতে দাবি করা হয়, কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার ১১নং রাজামেহের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে পেনাল কোড (দন্ডবিধি) ১৪৩/১৪৮/৪/৪/৩৮৫/৫০৬/৩৪ ধারার বিগত ২৭/০৪/২০১২ইং পিবিআই কুমিল্লা জেলার এস আই (নিঃ) মো ইকবাল হোসেন চার্জশীট দাখিল করেন। জনস্বার্থে তারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা পদটি সমীচীন নয় সরকার মনে করে। যেহেতু কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার ১১নং রাজামেহের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দ্বারা সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিষদ সহ জনস্বার্থে পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ ইউনিয়ন আইন ২০০৯ এর ৩৯ (১৩) বিধান অনুযায়ী উল্লেখিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের তার পদটি একই আইনে ৩০ (১) (৬) ধারা অনুযায়ী শূন্য ঘোষণা করা হল।

এই আদেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে জারি করা হল এবং তা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের নাম প্রকাশে এক অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা চিঠিটি যাচাই বাছাই করে বুধবার দুপুরে জানান, চিঠিটি ভুয়া। তিনি বলেন, ভুয়া চিঠিটি আমাদের বিভাগ থেকে করা হয়নি। ভুয়া চিঠি বিষয়ে বিভ্রান্ত না হতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর সোমবার বিকেলে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের রাজামেহার গ্রামের নিজামুদ্দিন বাড়ীতে ড্রেনমার্ক প্রবাসী আলা উদ্দিনের নতুন বাড়ি নির্মানের সময় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন সরকার তার দলবল নিয়ে আলা উদ্দিনের বড়বোন জাহানারা বেগমের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মানাধীন বাড়ি ভাঙচুরসহ হামলা করে ওই ণারীকে তালাবদ্ধ করে নির্যাতন করে। ওই হামলায় ওই নারী সে সময় ৯৯৯ নম্বর জরুরী সেবায় ফোন করে পুলিশের সহযোগীতায় মুক্ত হয়ে একই বছরের ২ ডিসেম্বর কুমিল্লার ৪ নং বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১১ নং রাজামেহের ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং সি আর ৪১৬-২১, দেবীদ্বার)। ওই মামলাটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গত ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আদালতে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানকেসহ প্রতিবেদন দাখিল করায় চলতি বছরের ৯মে ওই ইউপির চুলাশ গ্রামের মো. তাজুল ইসলামের ছেলে সিরাজুল ইসলাম ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বরখাস্ত করার জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি আবেদন করায় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি-১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ উর রহমান গত ২৪ মে এ আদেশ দেন।

বুধবার দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন সরকার জানান, আমার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে ভুয়া একটি চিঠি সৃজন করে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখে জানাবো।

বার্তাবাজার/এম আই