সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজস্ব অর্থে ইস্টার্ন রিফাইনারির ২য় ইউনিট নির্মান করতে যাচ্ছে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র তেল শোধনাগারে বর্তমানে মাত্র ১.৫ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল শোধন করে জেট ফুয়েল, পেট্রোল সহ পেট্রোলিয়াম পণ্যের মোট চাহিদার ২০% যোগান দিতে পারে। এছাড়া উপজাত হিসাবে উন্নত মানের বিটুমিন পাওয়া যায়।

রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপের জ্বালানি সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়লে ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির কাছে ছোটে জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য। আর এতেই বৈশ্বিক তেল ও গ্যাসের দাম রেকর্ড মূল্য বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ভেতর রাশিয়া সর্বোচ্চ আয় করে তেল রপ্তানি করে। ভারত ফিসকাউন্টেড রাশিয়ান ক্রুড অয়েল আমদানি এতটায় বৃদ্ধি করে যে আগের বছরের থেকে রুশ তেল ক্রয় ১০ গুনের বেশি বৃদ্ধি পায়৷ ভারতের মোট চাহিদার ২৮% তেল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে। ভারতের রিফাইনারি গুলি রুশ ক্রুড ওয়েল পরিশোধনে সক্ষম হওয়ায় তারা সুযোগটি কাজে লাগিয়ে চাহিদার থেকেও বেশি পরিমান তেল আমদানি করতে থাকে। শুধুমাত্র ২০২৩ এর জানুয়ারিতেই ভারত ১৪ লাখ ব্যারেল তেল কেনে রাশিয়া থেকে।

ভারতের এরকম তেল ক্রয়ের পর অনেকের আপত্তির মুখে জয়শঙ্কর অনেকটা পরিস্কারভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন এটা এখন তাদের তেল। অর্থাৎ তারা চাইলে এটা রপ্তানিও করতে পারে।

উচ্চমূল্যের ফলে বিকল্প হিসাবে বাংলাদেশের জন্য ও এসেছিল রুশ তেল কেনার প্রস্তাব। তবে তেলের স্যম্পল পরীক্ষা করে দেখা গেছে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে রুশ ক্রুড পরিশোধন করা যাবে না।

বাংলাদেশের তেল শোধন ক্ষমতার ঘাটতি বাংলাদেশকে পরিশোধিত তেলের বাজারের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে দিয়েছে যেটা নির্ভরশীলতার ঝুকি বাড়ায়। প্রাইস শকের সরাসরি প্রভাব পড়ার সুযোগ থাকে।

২০১৪ সাল থেকেই ইস্টার্ন রিফাইনারির ২য় ইউনিট নির্মানের কাজ ঝুলে আছে ফান্ডিং এর অভাবে। ফ্রান্সের টেকনিপ বা সৌদি আরামকো সবাই ফান্ডিং থেকে পিছিয়ে যাবার পর এখন ভাবা হচ্ছে জিজস্ব অর্থায়নে সেকেন্ট ইউনিট নির্মান শুরু করবে। খরচ ২৩,৭৪৬ কোটি টাকা! এতে প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রতি ব্যারেলে খচর বাচবে $৯ থেকে $১০ ডলার। বিপিসি ও অর্থ বিভাগ অর্থায়ন করবে।

এই শোধনাগারে রুশ ক্রুড ওয়েল সহ অনেক ধরনের ক্রুড রিফাইন করার প্রযুক্তি থাকবে। বর্তমান প্রথম ইউনিটের সক্ষমতার দ্বিগুন সক্ষমতা থাকবে এই ইউনিটে। ৩ মিলিয়ন টন পরিবেশ বান্ধব ইউরো -৫ তেল রিফাইন করতে সক্ষন হবে এই ইউনিট। এতে জেট ফুয়েল আর গ্যাসোলিনের শতভাগ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে৷ এমনকি জেট ফুয়েল রপ্তানির সুযোগ ও থাকছে। সেই সাথে লুব্রিকেন্ট ও সালফারের মত নতুন পণ্য উৎপাদন সম্ভব হবে যেটা এখন পুরোটাই আমদানি করতে হয়।

প্রাক্কলন অনুযায়ী  ২০২৬-২৭ এ বাংলাদেশে পেট্রো পণ্যের চাহিদা থাকবে ৮.০৩ মিলিয়ন। দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে দেশে তেল শোধন ক্ষমতা দাঁড়াবে ৪.৫ মিলিয়ন। অর্থাৎ প্রায় ৫০% এর বেশি চাহিদা ইস্টার্ন রিফাইনারির দুটি ইউনিট থেকে মেটানো সম্ভব হবে।

আমাদের উচিত ফসিল ফুয়েলের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা। বিদুৎ এর প্রধান উৎস করা উচিত এটমিক এনার্জি। এছাড়া অন্যান্য রিনিয়েবল এনার্জি। গাড়ি গুলিকে ইলেক্ট্রিকে রুপ দেয়া উচিত। রেলে ইলেক্ট্রিকের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। বেশ কিছু দেশ হাইড্রোজেন ফুয়েল চালিত পাবলিক বাস সার্ভিসে এনেছে। এদিকটাও এক্সপ্লোর করা উচিত৷ পরিবেশের যে অবস্থা আমাদেরকে ২০৫০ এর আগেই কার্বন নিউট্রালিটি অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে চাহিদা কমানো গেলে হয়ত ইস্টার্ন রিফাইনারি দিয়েই ১০০% চাহিদা মেটানো সম্ভব।

লেখা: ওয়াসী মাহিন

ইএক্স/ও.আর