বান্দরবান লামার ইতিহাসে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা এবং বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পৌর এলাকার ক্ষয়ক্ষতি ও বন্যা পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলার প্রিন্ট ও বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়াই কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন পৌর মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম। শনিবার (১৯ আগষ্ট’২৩) বিকাল সাড়ে ৩টার সময় লামা প্রেসক্লাব হলরুমে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় মেয়র বলেন, গত ৭,৮ এবং ৯ আগস্ট প্রবল বর্ষণের ফলে উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে পৌরসভা সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়ে। তারমধ্যে স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই লামা পৌর এলাকা। ঘরবাড়ি, দোকানপাট কৃষি জমি এবং পুকুরঘাট টানা তিন দিন বন্যার পানিতে প্লাবিত থাকায় অতীতের সকল রেকর্ডকে ডিঙিয়ে বন্যার ভয়াবহতা এবং ক্ষতি ব্যাপক আকার ধারণ করে।

বন্যা কালীন সময়ে বিদ্যুৎ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বিহীন প্রতিকূল অবস্থাতেও সাংবাদিকদের পেশার প্রতি অবিচল থেকে বন্যা পরিস্থিতির সচিত্র প্রতিবেদন তুলে আনার প্রশংসা করে মেয়র বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রতিবছর আমাদের পৌর এলাকা একটু বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। অতি বর্ষণের ফলে আলীকদম উপজেলার নিকটস্থ মায়ানমার সীমান্ত, পূর্ব দিকে রূপসী পাড়া, লামা ইউপির শেষ সীমান্ত এবং উত্তর দিকে গজালিয়া ইউপির সর্বশেষ সীমান্ত এলাকার বৃষ্টির পানি পৌরসভা তথা বাজারের পাশ ঘেষে মাতামুহরী নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় সুখ-দুঃখ পাহাড়ের বেগতিক কারণে স্বাভাবিক প্রবাহিত স্রোতে বাধা প্রাপ্ত হয়ে ফুলে ফেঁপে উঠে প্রতিটি ওয়ার্ডসহ জনবসতি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি জমি, পুকুর ও রাস্তাঘাট সহ ৮ থেকে ২৫/৩০ ফুট প্লাবিত হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসে অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়।

মেয়র বলেন, সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় ৯টি ওয়ার্ডে সাড়ে চার হাজার পরিবার বন্যা কবলিত ও পাহাড় ধ্বসের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে সম্পূর্ণ ঘর বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২শ পরিবার এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫শ পরিবার। বাজার এবং আশপাশ এলাকায় প্রায় এক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হওয়ায় ৭০ ভাগ মালামাল নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। একই সাথে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ৮৫ ভাগ আবাদি জমির ফসল নষ্ট, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি দপ্তরে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অসংখ্য গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া প্রায় ৯০ ভাগ রিংওয়েল বন্যায় প্লাবিত হয়ে সব মিলিয়ে পৌর এলাকায় শত কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

এদিকে পৌর এলাকায় বন্যা এবং পাহাড় ধ্বসের ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পার্বত্য মন্ত্রী বীরবাহাদুর উশৈসিং এমপির নির্দেশে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম, তারমধ্যে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে লামা বাজারের প্রধান সড়ক সহ বিভিন্ন গলি ও অভ্যন্তরীণ সড়ক সমূহ পরিষ্কার করে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্বত্য মন্ত্রী নিজে এসে বন্যা কবলিত দুই হাজার ৯শ পরিবারের মাঝে খাদ্যশস্য এবং ২’শ পরিবারে নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনে সকল ধরনের সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, লামা উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন সহ বেসরকারি উদ্যোগে মানবিক সহায়তাই যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেয়র বলেন, দুর্যোগ দূর দিন আগামীতেও আমরা সকলে একসাথে কাজ করব। এই দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সকলের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

বার্তা বাজার/জে আই