বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেছেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের ভর্তি শুরু হইতে পরবর্তী সব চিকিৎসা বিধিসম্মতভাবে আন্তর্জাতিক প্রাকটিস অনুসরণ করে সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৪ আগস্ট রাত পৌনে ৯টায় তিনি মৃতুবরণ করেন।

বুধবার (১৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানান তিনি।

তিনি বলেন, গত ১৩ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ইমার্জেন্সি বিভাগে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকে শুরু হইতে পরবর্তী সব চিকিৎসা বিধিসম্মতভাবে আন্তর্জাতিক প্রাকটিস অনুসরণ করে সম্পন্ন করা হয়।

তিনি বলেন, তার চিকিৎসায় অত্র হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সব চিকিৎসাদানকারী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকগণ সঠিকভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। পরদিন ১৪ আগস্ট বিকেল ৬টা ৪৫ মিনিটে তার সাডেন কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়। তার এডভান্স কার্ডিয়াক লাইফ সাপোর্ট প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা চলতে থাকে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই রোগের গতিপ্রকৃতি, চিকিৎসা ও সম্ভাব্য পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে তার সন্তান মাসুদ সাঈদী সম্যকভাবে জ্ঞাত আছেন।

এর আগে বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের কথা থাকলেও তা স্থগিত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তার আগে রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত সাঈদীকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওই রাতেই তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়।

কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ বন্দি ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় রোববার বিকেল ৫টার দিকে তিনি বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পরে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কারাগারের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাঈদীর মরদেহ বহনকারী ফ্রিজিং গাড়ি পিরোজপুরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় এবং পৌঁছায় সকাল ১০টার দিকে। এরপর বেলা ১টার দিকে জানাজা শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে সাঈদী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

সাঈদী ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পিরোজপুর-১ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন সাঈদীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। এর পর থেকে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল।

জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতের রুকন (দলটির পূর্ণাঙ্গ সদস্য) হন। ১৯৮৯ সালে তিনি জামায়াতের মজলিশে শূরা সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাঈদী ২০০৯ সাল থেকে জামায়াতের নায়েবে আমিরের পদে ছিলেন।

বার্তাবাজার/এম আই