চট্টগ্রামে সরকারি মুহসীন কলেজের জায়গায় অবৈধভাবে দোকান ঘর তুলে ভাড়া দিয়ে বছরের পর বছর অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন দখলদাররা। বিষয়টি জানতে পেরে বাগড়া দেন মুহসীন কলেজ ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা। ভাড়ার টাকা তাদের হাতে দেওয়ার শর্তে রাজি না হওয়ায় ওইসব দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন তারা।

শনিবার দুপুরে চকবাজার থানার দেব পাহাড় এলাকায় অবস্থিত দোকানগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার নেতৃত্বে ছিলেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাঈম। বিষয়টি স্বীকার করেছেন চকবাজার থানার ওসি মনজুর কাদের। তবে কেউ এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেননি।

জানা যায়, দেব পাহাড় এলাকায় অন্তত ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জায়গার মালিক মুহসীন কলেজ হলেও সেখানে দোকানঘর তুলেছেন অন্যরা। অবৈধভাবে দোকানঘর তুলে তা ভাড়াটিয়ার কাছে, ভাড়াটিয়ারা আবার উপ-ভাড়াটিয়ার কাছে ভাড়া দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ভাড়ার চুক্তিপত্রও করা হয়েছে। কয়েক বছর মেয়াদে এসব দোকান ভাড়া দিয়ে দখলদাররা অগ্রিম হিসাবে অন্তত ৪৩ লাখ টাকা নিয়েছেন।

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে মুহসীন কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা জানতে পারেন দোকানগুলো মুহসীন কলেজের জায়গায় গড়ে উঠেছে। সে হিসাবে এসব দোকানের মালিকও মুহসীন কলেজ হবে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতারা ওই সব দোকানে ব্যবসা পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীদের চাপ দেন যে, ব্যবসা করতে হলে দোকানগুলোর অগ্রিম বাবদ টাকা ও মাসিক ভাড়া তাদেরকে দিতে হবে।

কিন্তু এতে দখলদার বা ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরা রাজি হচ্ছিলেন না। তারা ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্র দেওয়ার শর্তে ভাড়া বা অগ্রিম টাকা দেওয়ার শর্ত দেন। কিন্তু ছাত্রলীগ দোকানের মালিক না হওয়ায় চুক্তিপত্র দেওয়ারও সুযোগ নেই তাদের। আর ব্যবসায়ীরাও চুক্তিপত্র ছাড়া তাদের ভাড়া দিচ্ছিলেন না। এতে ছাত্রলীগের নেতারা ক্ষুব্ধ হন। সর্বশেষ শনিবার দুপুরে মুহসীন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাঈমের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন গিয়ে দোকানগুলোতে তালা লাগিয়ে দেন। তারা হুমকি দিয়ে আসেন যে, হয়তো ভাড়া তাদের দিতে হবে, না হয় দোকান বন্ধ থাকবে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানগুলোর জমিদারের ভূমিকায় ছিলেন আফসারুল হাকিম চৌধুরী অশ্রু নামে এক ব্যক্তি। আবার তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন শাহেদ নামে অপর এক ব্যক্তি। শাহেদ বিভিন্ন জনকে উপ-ভাড়া দিয়ে ভাড়া আদায় করতেন। শাহেদের সঙ্গে বিভিন্ন দোকানদারের সঙ্গে ভাড়াটিয়া চুক্তিও রয়েছে। কয়েক মাস ধরে ছাত্রলীগ তাদের দোকানগুলোর ভাড়া দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে এলে ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় পড়েন।

রোববার দুপুর ১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় সবকটি দোকান বন্ধ। এসব দোকানের মধ্যে রয়েছে ওষুধের দোকান, ফলের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও ফটোস্ট্যাট।

বিজয় দাশ নামে এক ভাড়াটিয়া জানান, ‘তিনি উপ-ভাড়াটিয়া হিসাবে একটি দোকান পরিচালনা করেন। শনিবার দুপুরে মুহসীন কলেজ থেকে একদল ছাত্র এসে দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। তারা নিজেদের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বলে পরিচয় দেন। এরপর থেকে দোকান বন্ধ।’

এ প্রসঙ্গে মুহসীন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাঈম বলেন, ‘আমরা দোকানে তালা লাগাইনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ তালা লাগিয়েছে। একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে ওই জায়গায় দোকান বসিয়ে ভাড়া আদায় করছিল। কলেজের জায়গায় কেউ ভাড়া দিয়ে টাকা আদায় করবে-এটা হতে পারে না। এর আগে জামায়াত-শিবিরও ওই জায়গা ভাড়া দিয়ে টাকা লুটপাট করেছে। আমরা ছাত্রলীগ কলেজের জায়গা কাউকে ভাড়া দিতে দিব না।’ নিজেরা ভাড়ার টাকা আদায় করতে চেয়েছিলেন-এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

চকবাজার থানার ওসি মনজুর কাদের মজুমদার বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা দোকানে তালা দিয়েছে। বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। তবে কেউ আমাকে লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ কাউকে পাঠায়নি কারও দোকানে তালা দেওয়ার জন্য। তবে জায়গাটি আমাদের। আমাদের নামে বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) রয়েছে। কিন্তু একটি পক্ষ জায়গাটাতে দোকান বসিয়ে ভাড়া আদায় করছিল। এ ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানাব।’

বার্তাবাজার/এম আই