মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কাছাকাছি সময়ে ঢাকা সফর করতে পারেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়কারী রিচার্ড ন্যাপিউ আসছেন আজ রোববার রাতে। দুর্নীতি দমন বিষয়ে আলোচনার জন্য আসছেন তিনি। চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিরক্ষা সংলাপে যোগ দিতে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো প্যাসিফিক কমান্ডের কৌশলগত পরিকল্পনা ও নীতিবিষয়ক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টমাস জেমস। তা ছাড়া আগামী মাসের প্রথমার্ধে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার রূপরেখা চুক্তি (টিকফা) সংক্রান্ত পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে আসার কথা রয়েছে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিন্চের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী দুই মাসে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দলের ঢাকায় নিয়মিত ফোরামে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা সংলাপ এবং টিকফা পরিষদের বৈঠক প্রায় চূড়ান্ত। তবে নিরাপত্তা সংলাপ ঢাকায় হওয়ার কথা থাকলেও দিনক্ষণ চূড়ান্তকরণের আলোচনা এখনও চলছে।

ঢাকা-ওয়াশিংটন প্রকাশ্য টানাপোড়েনের মধ্যেই গত মাসে বাংলাদেশ সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। তার সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।

উন্নয়ন সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রম অধিকারের মতো ইস্যুগুলোতে সরব থেকেছে সবসময়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে মার্কিন চাপও নতুন নয়। তবে ২০২১ সালে র‌্যাবের ওপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এতদিনেও তুলে না নেওয়া ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতাসহ নানা কারণে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সরকার। মে মাসে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণায় দু’দেশের সম্পর্কের মধ্যে যেন নতুন দেয়াল ওঠে। সরকার বারবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেও নানাভাবে ঢাকাকে চাপে রাখছে ওয়াশিংটন। এমনও অভিযোগ আছে, মার্কিন মদদে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনকালীন সরকারের একদফা দাবিতে মাঠে নেমেছে। এদিকে সংবিধান মেনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে অনড় ক্ষমতাসীনরা।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নির্বাচনের ছয় মাস বাকি থাকায় সব সফরকেই নির্বাচনকেন্দ্রিক সফর হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও গুরুত্বের পুরো সুফল কাজে লাগাতেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ বন্ধুদেশগুলো এদেশে একটি ভালো নির্বাচন চায়। যাতে সামনের দিনে ইন্দো-প্যাসিফিক, আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির মতো বড় উদ্যোগগুলো গণতন্ত্র ও সুশাসনের অভাবে বাস্তবায়নে যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। তারা অংশীদারত্বটা আরও শক্তিশালীই করতে চায়। বাংলাদেশ চীন, রাশিয়া, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট বলেছে। অর্থনৈতিক কাঠামোতে থাকবে, কোনো নিরাপত্তা বলয়ে না, বাংলাদেশের এই দৃঢ় অবস্থানও সবার জানা। তাদের মূল চিন্তা- যাতে বাংলাদেশ অন্য কোনো বলয়ে ঝুঁকে না যায়। পদ্মা সেতু তো দৃষ্টান্ত হয়েই আছে। তারা একই রকম ভুল পদক্ষেপে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব হারাতে চায় না।

বার্তাবাজার/এম আই