স্থানীয় জনসাধারণ, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের চোখে ধোকা দেয়ার ষড়যন্ত্র করে কৌশলে সংবাদ সম্মেলন করেছে দীর্ঘ এক যুগ ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের লালাপাড়া ফুনকির মোড়ে মাদক ব্যবসা করে আসা আফজাল হোসেনের ছেলে মজিবুর রহমান ওরফে টুটুল ও তার স্ত্রী এমালী বেগম।

গত বুধবার (০২ আগস্ট) দুপুরে শহরের বিশ্ব রোড মোড়স্থ একটি অফিসে এই সংবাদ সম্মেলন করে তারা। মাদক ব্যবসায়ী স্বামী-স্ত্রী এমন কূটকৌশল অবলম্বন করায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মহারাজপুর ইউনিয়নের সচেতন বাসিন্দারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মাদক নির্মূলে জেলা পুলিশ যখন সোচ্চার, তখন একজন মাদক ব্যবসায়ীর এমন উদ্ধ্যোত্বপূর্ণ সাহসে স্তম্ভিত এবং বিষ্মিত জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ। এমন কূখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী এলাকাবাসীর এবং মহারাজপুর ইউনিয়নসহ জেলাকে মাদকমুক্ত করার জোর দাবীও জানিয়েছেন সচেতন মহল।

জানা গেছে, বর্তমানে টুটুলের বিরুদ্ধে ৬টি মাদক মামলা চলমান আদালতে। তাদের মাদক কারবারের কারনে অতীষ্ট মহারাজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালটুলি, নিচুধুমি, চৌধুরীটোলা ও লালাপাড়া গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা।

সম্প্রতি এর বিরুদ্ধে চারটি গ্রামের তিন শতাধিক বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে মাদকবিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়, মাদক ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান ওরফে টুটুল ও তার স্ত্রী এমালী বেগমের নাম। পরে ৪ গ্রাম থেকে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধি নিয়ে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়।

সমাবেশের পর সক্রিয় হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। এতে চাপে পড়ে যায় মাদক ব্যবসায়ী টুটুল ও তার স্ত্রী। এমন পরিস্থিতিতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন, মাদক ব্যবসায়ী স্বামী-স্ত্রী। এসময় আগামীতে মাদক ব্যবসা না করার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

এটিকে, মাদক ব্যবসা চালিয়ে নেয়ার নতুন কৌশল বলছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়াও মাদকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী সোচ্চার হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ ও স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের কৌশলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার কুট কৌশল বলে মতামত মাদক বিরোধী সমাবেশকারীদের।

মহারাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে মহারাজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালটুলি, নিচুধ‚মি, চৌধুরীটোলা ও লালাপাড়া গ্রামে মাদক ব্যবসা ব্যাপকহারে বেড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও থানাকে বিষয়টি অবহিত করলেও কোন সুরাহা মেলেনি। সাম্প্রতিক সময়ে এসব এলাকায় বহিরাগত মাদক সেবীদের আনাগোনায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এমনকি মাদকের কারনে গ্রামে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম বেড়েছে।

মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদ ইসলাম রাজন বলেন, টুটুল ইউনিয়নের একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। স্থানীয়দের ব্যাপক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপের কারনেই হয়ত এমনটা করতে পারে। কৌশল হিসেবে অথবা স্যতিকার মাদক ছাড়তে চান কি না তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ক্ষতিয়ে দেখবে।

বুধবার (০২ আগস্ট) দুপুরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মাদক ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান ওরফে টুটুল বলেন, আমি গত ১২ বছর ধরে গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তাই এলাকাবাসী আমাকে মেনে নিচ্ছেনা। তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। তাই বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলন করছি। আমার নামে এখনও ৬টি মাদক মামলা রয়েছে। মামলাগুলোতে জামিনে আছি। তাই মাদক ব্যবসা ছাড়তে চাই। সংবাদ সম্মেলনে কৌশল করে বক্তব্য রাখলেও মাদক ব্যবসা ছাড়ার কোন যৌক্তিক কারন দেখাতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হামিদুল হক বলেন, এর আগে কখনও কাউকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে মাদক ব্যবসা ছাড়তে দেখা যায়নি। তবে টুটুল যদি মাদক ব্যবসা ছাড়তে চাই, তা ভালো উদ্যোগ। তবে পূর্বের চলমান ৬টি মাদক মামলায় কোন ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই তার। পূর্বের অপরাধের জন্য যথাযথ শাস্তি পেতে হবে তাকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবুল কালাম সাহিদ বলেন, কেউ মাদক ব্যবসা ছাড়তে চাইলে এমন উদ্যোগকে আমরা সাদরে গ্রহণ করব। তবে এনিয়ে পরবর্তীতে প্রত্যক্ষভাবে তাদেরকে কোন ধরনের সহযোগিতা করার সুযোগ পুলিশের নেই।

উল্লেখ্য, শুধু মহারাজপুর নয়, জেলাজুড়েই চলছে মাদকের ছড়াছড়ি। তরুণ সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাতে জেলা পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক নির্মূলে কার্যকর ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবেন এমনটায় আশা সচেতন মহলের।

বার্তাবাজার/এম আই