আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছেই। দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থানে সংকট সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাজপথ দখলে ব্যস্ত দুদল। কয়েক মাস ধরে একইদিনে কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। এতে বাড়ছে উত্তেজনা। ২৭ জুলাই রাজধানীতে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদল। এতে রাজপথে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে উৎকণ্ঠা।

রাজপথের দখল ছাড়বে না আওয়ামী লীগ। তারা মনে করছে, সরকারের পতন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভন্ডুলের লক্ষ্যে ২৭ জুলাই বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে। ২০১৩ সালের মে মাসে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে সরকারের পতন ঘটানোর যে চেষ্টা চালিয়েছিল, তাও মাথায় আছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। এসব বিষয় সামনে রেখেই ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ব্যানারে পালটা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এদিন শাসক দল ঢাকায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক জমায়েতের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ নিয়ে চলছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। এছাড়াও বিএনপিকে প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপির পরবর্তী পদক্ষেপ দেখে তারা সেই কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

জানা যায়, বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা আসবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা পথে বা ঢাকার কোনো স্থানে যাতে বসে পড়তে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।

যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তাদের সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। বিএনপির পালটা সমাবেশ করছেন কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে সহাবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করব। এর আগে লিখিত বক্তব্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে দেশবিরোধী চক্র, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী আবারও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অগ্নিহত্যার ড্রেস রিহার্সেল হিসাবে তারা রাজধানীর অন্যতম বিদ্যাপীঠ বাঙলা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।

একই দিন পৃথক এক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সংঘাত চায় না। তার দলের পক্ষ থেকে সংঘাতের আশঙ্কাও নেই। তিনি বলেন, সংঘাতের উসকানি আমরা কখনো দেব না। কারণ, আমরা পাওয়ারে আছি। তবে কেউ যদি সংঘাত ও অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় উসকানি দেয়, জনগণের জানমাল রক্ষায় শান্তির জন্য প্রটেকশন দেব।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির নবগঠিত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির পরিচিতি সভায় এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠনের বৃহস্পতিবারের সমাবেশ যাতে সর্বাত্মকভাবে সফল করা যায়, সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতারা সোমবার রাতে ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সোমবার বলেন, বিএনপি বৃহস্পতিবার ঢাকায় কোনো ধরনের সহিংসতার চেষ্টা করলে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। আমরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আছি। তাছাড়া ওইদিন ঢাকায় আমাদের তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সমাবেশ রয়েছে। বিএনপি গায়ের জোরে কিছু করতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন সংগঠন। আমাদের চোখের সামনে বিএনপি যদি নাশকতার চেষ্টা করে, অবশ্যই তা প্রতিহত করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তাছাড়া সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো আছেই। এ সময় তারা নিশ্চয় বসে থাকবে না।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি বলেন, বৃহস্পতিবার বিএনপি ঢাকায় কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে আমরা তা প্রতিহত করব। আমাদের নেতাকর্মীদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

২৭ জুলাই দুপুরে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে যে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করছে, সেখানে সর্বোচ্চ নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করবে দলটি। দেশের বিভিন্ন স্থানে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে এই সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে বলে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জানান যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এর আগে এই কর্মসূচির নাম ছিল তারুণ্যের জয়যাত্রা। যুবলীগ এককভাবে এ দিন ঢাকায় সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু রোববার রাতে এই কর্মসূচির নাম পরিবর্তন করা হয়। সেই সঙ্গে যুবলীগের সঙ্গে যুক্ত করা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে। যৌথভাবে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের।

সংবাদ সম্মেলনে মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ২৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও যুবলীগ নেতা রাকিব ইমামের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২১ জুন কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরসভা শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইফতেখার অনিক বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় নিহত হন। এর আগে বগুড়া শহর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ হাসান ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রমজান আলীকে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করে বলেও জানান নিখিল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, তিন সংগঠনই ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীদের সমাবেশে আনবে। ছাত্রলীগ সচিবালয় থেকে শহিদ নূর হোসেন স্কয়ার হয়ে সমাবেশস্থলে আসবে। যুবলীগ আসবে গোলাপ শাহ মাজারের দিক থেকে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিক থেকে এসে সমাবেশস্থলে অবস্থান নেবে। ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী ১১ জেলার নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেবেন। প্রতিটি জেলা থেকে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শতাধিক বাস ছেড়ে আসবে ঢাকার মহাসমাবেশের উদ্দেশে। বাসগুলো যাতে নেতাকর্মী ভর্তি থাকে সে ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রস্তুত থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের সেই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপে রয়েছে বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা সংলাপ নিয়ে কিছুই ভাবছেন না দলটির নেতারা। দাবি আদায়ে অলআউট প্রস্তুতি নিয়ে রাজপথে আছেন নেতাকর্মীরা। ২৭ জুলাই রাজধানীর মহাসমাবেশ সফলে ব্যস্ত হাইকমান্ড থেকে শুরু করে সব স্তরের নেতারা। ওইদিন ঢাকায় নেতাকর্মীদের ঢল নামাতে চান তারা। এ কর্মসূচিকে টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে দেখছেন দলটির হাইকমান্ড ও নীতিনির্ধারকরা। মহাসমাবেশের পর হঠাৎ আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি পালটে যেতে পারে বলে মনে করছেন তারা। সবকিছু ঠিক থাকলে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ঢাকাকেন্দ্রিক টানা কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে। তা সফলে সারা দেশ থেকে মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের ঢাকাতেই রাখার চিন্তাভাবনা চলছে। ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের সার্বিক প্রস্তুতিসহ সময় নিয়ে মহাসমাবেশে আসতে বার্তা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে জাতিকে একটা বার্তা দিতে চায় বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, রেকর্ড লোকসমাগম নিশ্চিত করা গেলে সরকার পতন আন্দোলনে দলটির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে। অনেকেই তাদের আন্দোলনে শামিল হবেন, যা একপর্যায়ে গণ-আন্দোলনের রূপ পাবে। পাশাপাশি দেশের প্রায় সব দল ও বেশিরভাগ মানুষ সরকারের পদত্যাগে রাজপথে নেমে এসেছে, এমন একটি বার্তাও যাবে সারা বিশ্বে। কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীনরা হামলা চালালে কিংবা বাধা দিলে সেটাকে কাজে লাগাবে বিএনপি। উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসূচি দেওয়া হবে, যা সাধারণ মানুষেরও সমর্থন পাওয়া যাবে।

এদিকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এ দুটি স্থানের কথা উল্লেখ করে সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) অবহিত করা হয়েছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত চিঠিতে বলা হয়, ‘শুভেচ্ছা নেবেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে আগামী ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। উল্লিখিত যেকোনো একটি স্থানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের বিষয়টি আপনাকে অবহিত করা হলো।’

সরকারের পদত্যাগের একদফা আন্দোলন এবার দীর্ঘ সময় নিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। সারা দেশে বাদ দিয়ে ঢাকাকে টার্গেট করেই চূড়ান্ত করা হয়েছে কর্মসূচি। দলটির নেতারা মনে করেন, বিগত আন্দোলনে মহানগরের ব্যর্থতায় ক্ষমতাসীন দলের দখলে ছিল রাজধানী। তাই এবার ঢাকাকে দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে সে লক্ষ্যে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সারা দেশে কর্মসূচি না দিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের রাজধানীতে আনার সিদ্ধান্ত হয়।

মহানগর নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজপথে থেকে আন্দোলনে ভূমিকা রাখবে তারা। বিগত সময়ে ঢাকার সমাবেশে বাইরে থেকে নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নমনীয় ভূমিকায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবে বলে মনে করছেন তারা। তবে শেষ মুহূর্তে তারা কঠোর হতে পারে, এমন শঙ্কা থেকে আগেভাগেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। শনিবার তারুণ্যের সমাবেশে অংশ নিতে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগ থেকে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসেন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর রাতেই চার বিভাগের তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দলটির হাইকমান্ড। ২৭ জুলাই মহাসমাবেশের আগে তাদের এলাকায় না যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

মহাসমাবেশের পর কী কর্মসূচি দেওয়া হবে তা নিয়ে সিনিয়র নেতা ও সমমনা দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি জটিল না হলে আপাতত হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই সরকারের ওপর আরও চাপ তৈরি করতে চান তারা। সেক্ষেত্রে সচিবালয়সহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাও, রাজধানীর কয়েকটি স্থানে একযোগে সমাবেশ করার বিষয়টি আলোচনায় আছে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের পদত্যাগে সব গণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগিতায় চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন আজ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পর্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ২৭ জুলাই ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবে বলে আমরা আশা করি। সেখানেও একটি বার্তাই থাকবে-সরকারের পদত্যাগ।

সরকারের পদত্যাগে এবারের আন্দোলনে সফলতার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। এ আন্দোলনে জনগণ নেমে পড়েছে। এটা এখন গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। ইতিহাস বলে গণ-আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না। জনগণ এ সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরবে।

রাজধানীর মহাসমাবেশ সফল করতে দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। সোমবার নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও আশপাশের জেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে যৌথ সভা হয়। এতে মহাসমাবেশ সফল করতে নানা পরামর্শ তুলে ধরেন তারা। এর আগে রোববার সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ।

সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা যাতে ঢাকায় আসেন তা মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় কয়েক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশ সফলে একাধিক টিম করা হয়েছে। কোন ইউনিটের নেতাকর্মীরা কোথায় অবস্থান করবেন, তাদের খাওয়া-দাওয়াসহ সার্বিক বিষয় দেখভাল করতে তারা কাজ করবেন।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকারের পদত্যাগ ছাড়া এই মুহূর্তে আমরা অন্য কিছু ভাবছি না। সরকার নির্বাচন এগিয়ে আনছে কি না, কারও সঙ্গে আলোচনায় বসবে কি না সেদিকে নজর দেওয়ার সময় আমাদের নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের পতন নিশ্চিত করাই বিএনপির মূল টার্গেট।

তিনি বলেন, একদফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে রাজধানীর মহাসমাবেশ টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে কাজ করবে। আমরা প্রতিটি কর্মসূচিতে আগেরটার চেয়ে বেশি লোক জমায়েত করতে পেরেছি। ঢাকার মহাসমাবেশে প্রত্যাশার চেয়ে বিশাল গণজমায়েত হবে বলে আশা করি। কারণ বিএনপির আন্দোলনে এখন জনগণ সম্পৃক্ত হয়েছে। ঢাকার মহাসমাবেশে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়বে বলে আশা করি।

রাজনৈতিক কর্মসূচি ও পালটা কর্মসূচিতে উত্তপ্ত রাজপথ। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি যেদিন কর্মসূচি দিচ্ছে, সেদিনই ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকেও দেওয়া হচ্ছে পালটা কর্মসূচি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৭ জুলাই রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে ঘোষণা করা হয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ শীর্ষক সমাবেশ। দুদলের এই কর্মসূচিকে ঘিরে দিয়েছে নানা শঙ্কা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চ্যালেঞ্জে পড়েছে পুলিশ। এমন বাস্তবতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে এবার নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করা হয়েছে নিরাপত্তা ছক। পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ ও সমাবেশ নিয়ে পুলিশের মনোভাব ইতিবাচক থাকলেও যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রয়োজনে তারা কঠোর হবে।

তারা আরও জানান, কোনো দলের কর্মসূচিতে আগ বাড়িয়ে পুলিশ বাধা দেবে না। তবে কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সে বিষয়েও নজর রাখা হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে পর্যাপ্ত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হবে। কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাপ্রবাহের স্থির ও ভিডিও চিত্র ধারণ করা হবে।

পুলিশের পক্ষ থেকে আগ বাড়িয়ে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না, যাতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। যানচলাচল স্বভাবিক রাখা এবং অফিস-আদালত চালু রাখাসহ নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর অংশ হিসাবে রাজপথে সক্রিয় থাকবে ট্রাফিক পুলিশ রাজধানীতে বাড়তি দায়িত্বে থাকবে। এ ছাড়া ডিএমপির পাশাপাশি র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআই, শিল্প পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, এপিবিএন, নৌ পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিট সক্রিয় থাকবে। সমাবেশ ও মহাসমাবেশস্থলের আশপাশের উঁচু ভবনে বসানো হবে ওয়াচ টাওয়ার।

রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে পুলিশের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার বিকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সোমবার বলেন, ‘আইন ও বিধি অনুযায়ী পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্যের অপেশাদার আচরণ যেমন বরদাশত করা হবে না, তেমনি কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিন্দুমাত্রও ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ বিস্তারিত জানতে এআইজির (মিডিয়া) সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন তিনি।’ যুগান্তরের পক্ষ থেকে এআইজি (মিডিয়া) মনজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘কর্মসূচিকে ঘিরে আমরা পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন করব। অনুমতি চেয়ে বিএনপি যে চিঠি দিয়েছে সেটি এখনো আমার হাতে আসেনি। চিঠি পাওয়ার পর গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি বলেন, ‘সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক অধিকার। তবে কর্মসূচির নামে কেউ যদি নাশকতার চেষ্টা চালায় আমরা তাকে আইনের আওতায় আনব। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, এমন কোনো কিছু করতে দেওয়া হবে না।’

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে আমরা এখনো প্রতিবেদন দিইনি। দ্রুতই প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে প্রতিবেদনে নেতিবাচক কিছু থাকছে না। কোনো নাশকতার আশঙ্কা এখনো নেই। সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দেওয়া হবে। প্রতিবেদনে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশ তুলে ধরা হবে। গত ১২ জুলাই পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশের আগে যে ধরনের প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে অনেকটা সে ধরনের প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশকে কৌশলী ভূমিকা নিতে পরামর্শ দেওয়া হবে। ডিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধ কিছু নিয়ে যাতে কেউ মহাসমাবেশে যোগ দিতে না পারে সেজন্য সমাবেশস্থল, আশপাশ এবং ঢাকার প্রবেশপথে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হবে। চেকপোস্টগুলোতে হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হবে। তল্লাশি কাজে র‌্যাব ও ডিএমপির ডগ স্কোয়াড নিয়োজিত করা হতে পারে। কোনো অরাজক পরিস্থিতি বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তা নিয়ন্ত্রণে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য পুলিশ যথেষ্ট তৎপর। মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ৩৬৫ দিনই নগরবাসীর নিরাপত্তা দিই। সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমরা নিরাপত্তা দিই। তবে যেদিন রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকে সেদিন অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি তৎপর থাকি। ২৭ জুলাইয়ের কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি কোনো ধরনের জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর বা আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ঘটে তাহলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নগরবাসীর নিরাপত্তায় প্রচলিত আইন প্রয়োগে পুলিশ পিছপা হবে না। সূত্র: যুগান্তর

বার্তাবাজার/এম আই