আগামী ২৭ জুলাই সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করতে পুলিশকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। মহাসমাবেশস্থলের আশপাশের আরও ১০টি এলাকায় বিএনপির সমমনা দলগুলো পৃথক সমাবেশ করবে। এভাবে বিপুলসংখ্যক লোক জড়ো করে শহরের বড় অংশ নিজেদের দখলে রাখার পরিকল্পনা করছে দলটি। বিএনপির একাধিক সূত্রে সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার ১১ স্থানে পৃথক কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও সমমনা ৩৭টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্য দিয়ে রাজধানীর বৃহৎ অংশকে মহাসমাবেশের স্থান হিসেবে রূপ দেওয়ার চিন্তা করছে তারা।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, ঢাকার মহাসমাবেশ আন্দোলনের বাঁক বদলে দেবে। এ জন্য এই কর্মসূচি ঘিরে সব পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতি দেওয়ার লক্ষ্যে আরও কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

যুগপৎ আন্দেলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ধারণা করছে, মহাসমাবেশে লোক জমায়েতের ক্ষেত্রে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী পথে পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হতে পারে। সমাবেশের অনুমতি প্রশ্নেও জটিলতা তৈরি করা হতে পারে। সব বিষয় বিবেচনায় রেখে বাধা উপেক্ষা করে কিভাবে সমাবেশে আসতে হবে, সেই পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।

দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, সমাবেশে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিএনপি সমর্থক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানদেরও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। কয়েক মাসে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এসব জনপ্রতিনিধির সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছিল। মহাসমাবেশে তাঁদের নিজ অনুসারীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।

২৭ জুলাই বিএনপির মিত্র দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাব অথবা মৎস্য ভবনের সামনে, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি যৌথভাবে মতিঝিলে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি পান্থপথে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ পল্টনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংক, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পল্টনের আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য জাতীয় প্রেস ক্লাবে, বাংলাদেশ লেবার পার্টি পল্টনে, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে এবং আমার বাংলাদেশ (এবি পার্টি) পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে।

বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, সমাবেশে বাধা দিতে গেলে সরকারই বিপদে পড়বে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে। দেশি-বিদেশিরাও সক্রিয় হবে তখন। আর বাধা না দিলে বিএনপি বড় কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলবে। ফলে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও মানসিক চাপ তৈরি হবে।

বিএনপির সমমনা কয়েকটি দল জানায়, মহাসমাবেশ থেকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে পরবর্তী কিছু ঘোষণা করার পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা। এতে সরকার সাড়া না দিলে ৩০ জুলাই থেকে টানা কর্মসূচি দেওয়ার মতও দেন তাঁরা। সূত্রগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত যে আলোচনা হয়েছে তাতে দাবি আদায়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত টানা কর্মসূচি পালনের পর ১৫ আগস্ট শোক দিবসের জন্য সপ্তাহখানেক স্থগিত রাখা হতে পারে। এরপর ২০ আগস্ট থেকে আবার কর্মসূচি শুরু হবে। এ সবই আলোচনার পর্যায়ে আছে। সব কিছু নির্ভর করবে সরকার মহাসমাবেশ ঘিরে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় তার ওপর।

এদিকে গতকাল বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে মহানগর বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও আশপাশের জেলাগুলোর নেতাদের যৌথ সভা হয়। এরপর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ঢাকায় মহাসমাবেশের দিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সরকার দেশে সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, সরকারের বিশেষ ব্যক্তিরা উসকানিমূলক কথা বলছেন এবং উসকানিমূলক কাজ করছেন। যুবলীগ তাদের ২৪ জুলাইয়ের কর্মসূচি ২৭ জুলাই নিয়েছে। এটা পরিষ্কার, একটা সংঘাতমূলক অবস্থা সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই তারা এটা করছে। এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদি কোনো রকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে, তার দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত যত আন্দোলন করে এসেছি, আমাদের প্রতিটি আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমাদের ওপর অনেক আক্রমণ হয়েছে, অনেক লোককে আহত করা হয়েছে। এর পরও আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’

বার্তাবাজার/এম আই