প্রচণ্ড দাবদাহে চট্টগ্রাম নগর ও এর আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানির জন্য হাহাকার চলছে। ঘন ঘন লোডশেডিং আর পানির সংকটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রমজানের আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভোক্তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিল বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস নিয়ে সংকট হবে না। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টো। এমতাবস্থায় জরুরিভাবে চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ক্যাব নেতারা।

বিবৃতিতে সই করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহে স্বাভাবিক জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং মানুষের দুর্ভোগের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বাড়ছে। চট্টগ্রামে ছোট-বড় ২৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। কাপ্তাই লেকের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির অভাবে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামে চালু রয়েছে ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫৮ মেগাওয়াট। কিন্তু এসব কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৬৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর মধ্যে খুঁড়িয়ে চলছে ৬টি। অপরদিকে উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদনে চলছে ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এখন মাত্র ১ নম্বর ইউনিটে (৪৬ মেগাওয়াট) ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াটের ২টি (প্রতিটি ২১০ মেগাওয়াট করে) বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে অনেক দিন ধরে। একইসঙ্গে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটিও অনেক দিন থেকে বন্ধ। ২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্ল্যান্টও বন্ধ রয়েছে।

এদিকে বছরের পর বছর ধরে টেকনাফ সোলার প্ল্যান্ট ও কাপ্তাই সোলার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। তাই নামমাত্র তালিকার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তালিকায় না রেখে এগুলোকে সচল করা যেমন দরকার তেমনি বৃহত্তর চট্টগ্রামে ঘাটতি বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে জরুরিভাবে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো উচিত।

এছাড়া নগরজুড়ে পানির হাহাকারে জনজীবন আরও অতিষ্ঠ। পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা একের পর এক নিত্য নতুন প্রকল্প হাতে নিলেও লবণাক্ততা ও সুপেয় পানির পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। আর মাস গেলেই ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ নানা বাহারী অজুহাতে পানির মূল্যবৃদ্ধির খড়ক দিয়ে ভোক্তাদেরকে বিপর্যস্ত রেখেছে। নগরবাসী সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম বন্ধে সরকারের আশু উদ্যোগ কামনা করে।