ভারত-পাকিস্তান নিয়ে গাওয়া ৩ নারীর গান ভাইরাল

সীমান্ত নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলছে তুমুল উত্তেজনা। ঠিক সে সময়ই পাকিস্তানি তিনজন জনপ্রিয় তারকা তাদের কবিতা-গান ও অভিনয়ের মাধ্যমে দিয়েছেন শান্তির বার্তা। তিন বোনের তৈরি এক মিউজিক ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গানটিতে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের প্রতীক হিসেবে নিজের বাড়ির মধ্যেই দেয়াল দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেয়ালের দুপাশে দুটি রান্নাঘর। তার একটিতে রয়েছেন পাকিস্তানের এক মুসলিম নারী এবং অন্যটিতে রয়েছেন ভারতীয় হিন্দু নারী। তাদের এ ধরনের উপস্থাপনের মাধ্যমে সীমান্ত নিয়ে বিরোধের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

পাকিস্তানের টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী বুশরা আনসারির গাওয়া গানটি ভাষান্তর করলে দাঁড়ায়, শোনো আমার মিষ্টি প্রতিবেশী/চড়ুই আর কাক সীমান্ত পেরিয়ে উড়ে বেড়াই অবাধে/নিয়ে যায় আমাদের খাবার/তাদের ভিসা দেয় কোন অফিস?/বড় সাধ জাগে আমি পাখি হবো/যখন খুশি তোমায় করবো আলিঙ্গন।

গানটি এমন এক সময় প্রকাশ করা হলো যখন ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণায় নেমেছে মোদির দল। গায়িকা বুশরা আনসারির চার মিনিটের এই গানটি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশেও ভাইরাল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নারী শিল্পীর গাওয়া গানে মডেল হিসেবে নারীই থাকার কারণে সেখানকার নারীদের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

পাঞ্জাবে মোট ভোটারের ৪৭ শতাংশ নারী। চলতি বছরের ১৯ মে সেখানে লোকসভা নির্বাচন। ‘হামসে মে জায়া’ শিরোনামের এই গানটি এবারের নির্বাচনে সেখানে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ বিজেপি যেখানে পাকিস্তানবিরোধী কথা বলে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন; তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বুশরা আনসারি বলেছেন সম্প্রীতির কথা।

ওই দুই নারীর হৃদয়স্পর্শী কথোপকথন অনেকটাই বিস্ফোরকের মতো কাজ করেছে। সম্পর্ক, রাজনীতি, সীমান্ত, মানবিকতা নিয়ে কথা বলা হয়েছে গানটিতে। যেগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।

সেখানে কথা বলা হয়েছে, দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করা পরিবারের ব্যাপারে, ক্ষুধার্ত শিশুর ব্যাপারে এবং খাবারের থালার ব্যাপারে; চাইলেও যেখানে দেয়ালের ওপার থেকে কোনো কিছু এপারে স্থানান্তর করার উপায় নেই।

গানের অভিনয় শিল্পীরা হলেন-বুশরা আনসারি (৬১); সঙ্গীতশিল্পী এবং পাকিস্তানের টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। বুশরা বলেন, ‘আমার বড় বোন নীলম আহমেদ বশির (৬৬) গানটির কথা লিখেছেন। আর আমার ছোট বোন আসমা আব্বাস (৫৬) এই গানে আমার সঙ্গে অভিনয় করেছেন।’

তিনি আরও বলেন,‘আমরা কখনো ধারণাও করিনি যে, একটি ঘরের মধ্যে দৃশ্যধারণ করা গানের ভিডিও প্রকাশের স্বল্প সময়ের মধ্যে দুদেশ থেকে এরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। মূলত সেসব নারীদের জন্য এই গান, যারা গৃহে আবদ্ধ থাকে এবং বাস্তবতা এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে না। তাদেরকে জানানোর জন্যই গানটি।’

গত ৪ এপ্রিল গানটি ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। সে সময়ই আনসারি বলেন, ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গানটি প্রকাশ করা হচ্ছে না। বরং দুদেশের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা প্রশমনের জন্যই গানটি।

অভিনেত্রী আরও বলেন,‘গত মাসে যখন আমার বোন এই কবিতা লেখে। তখনই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, যত দ্রুত সম্ভব এটির দৃশ্যধারণ করে শান্তির বার্তা দেব। কোনোভাবেই ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নয়, বরং শান্তির বার্তা দিতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।’

বুশরা বলেন, ভারত থেকে অনেকেই এ গানটির ব্যাপারে তাদের কাছে প্রশংসামূলক বার্তা পাঠিয়েছেন। আবার অনেকে এই বোনদেরকে ভারতের দালাল বলতেও ছাড়েননি।

অন্যদিকে পাঞ্জাবের বিজেপির প্রধান সৈয়দ মালিক বলেন, বুশরা আনসারি এবং অন্যান্য শিল্পীদের উচিত সবার আগে পাকিস্তানের সরকার এবং সে দেশের সেনাবাহিনীকে এটা বলা যে, তারা যেন সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন বন্ধ করে; যারা ভারতে হামলা চালাচ্ছে। উরি কিংবা পুলওয়ামার ঘটনা প্রমাণ করে যে, সন্ত্রাসের কারখানা হলো পাকিস্তান। এখন পর্যন্ত তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেনি। সেখানে একপাক্ষিকভাবে শান্তি ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি করা যায় না। নারী ভোটার কিংবা যেকোনো ভোটার এ ধরনের ভিডিও দেখে প্রভাবিত হবে না।

মিউজিক ভিডিওটির একদম শেষের দিকে দুই প্রতিবেশী কাঁটাতার পেরিয়ে পরস্পরের কাছে পৌঁছে যেতে চাইছেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন সেটা সম্ভব নয়। তখন তারা নিজেদের ওড়না উড়িয়ে দিচ্ছেন। কাঁটাতারের প্রাচীর পেরিয়ে সেই ওড়না পৌঁছে যাচ্ছে প্রতিবেশীর আঙিনায়।

গানের অন্যতম অভিনয় শিল্পী নীলমের কথায়, ‘ভিডিওর এই অংশটি দেখে আমাকে ফোন করেছিল আমাদের বন্ধু, আমেরিকাবাসী এরাম সৈয়দ। ‘উইমেন স্ট্যান্ডিং ফর পিস’ নামে একটি সংস্থা চালায় সে। আমায় বলল, ঠিক এ-রকমই একটা ওড়না-বিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। দুদেশের অনুমতি পেলে ওয়াঘা-আট্টারি সীমান্তে এ মাসের ১৮ তারিখে দোপাট্টা বিনিময় করবেন দুদেশের মেয়েরা।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর