রফতানি নিষিদ্ধের কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার চড়া দাম

মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, মধ্য প্রদেশ ও ভারতের অন্যান্য পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে মওসুমের বাইরে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে, যেটা ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত কখনও হয়নি। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ, যেহেতু তিনি অর্থনীতির নিম্নগতি ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছয় বছরের মধ্যে নিম্নতম পর্যায়ে চলে গেছে, এবং অনেকেই অর্থনীতির অবনতির আশঙ্কা করছেন।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অধিকাংশ খাবারেই পেঁয়াজ বাধ্যতামূলক। পেঁয়াজের কারণে ভারতে সরকার পতনের নজিরও ইতিহাসে রয়েছে। ১৯৯৮ সালে দিল্লী আর রাজস্থানে এ কারণেই সরকারের পতন হয়েছিল। ১৯৮০ সালে পেঁয়াজের উচ্চমূল্যের কারণেই ইন্দিরা গান্ধীর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ রাখাটা সহজ হয়েছিল। অনেকেই সেবারের নির্বাচনকে ‘পেঁয়াজের নির্বাচন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

দেশের ভেতরের চাপ ও চাহিদার কারণে ভারত সরকার সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। উল্টা ঘোষণা দেয়া হয় যে, আফগানিস্তান, তুরস্ক, ইরান ও মিশর থেকে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করবে ভারত।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে কাশ্মীরের বিষয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। এর পর থেকেই তুরস্ক আর ভারতের সম্পর্কে শীতল অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু, পেঁয়াজের সঙ্কট বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান সরকার আবারও আঙ্কারার কাছে ফিরেছে। দ্য প্রিন্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের প্রাইস স্ট্যাবিলাইজেশান ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কমিটি (পিএসএফএমসি) ২২ নভেম্বর তুরস্কের কাছ থেকে ১১,০০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য টেন্ডার দিয়েছে। মাত্র একদিন আগে ২১ নভেম্বর তুরস্ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করে, যেখানে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের ব্যাপক সমালোচনা করা হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি নয়াদিল্লীর রামনাথ গোয়েনকা লেকচারে সম্ভবত সঠিক কথাটাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ ভোগ্যপণ্যের বিষয় সামনে আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অর্থনীতিই ভারতের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকায় থাকবে।

ভারতের পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্ত একইভাবে ঐতিহ্যগত পররাষ্ট্র নীতির উপরও প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানির প্রায় ৭৫ শতাংশই আসে ভারত থেকে। রফতানি নিষিদ্ধের কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২২০ টাকায় (প্রায় ২.৫ ডলার) গিয়ে ঠেকেছে। অক্টোবরে দিল্লী সফরকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মজা করে বলেছিলেন যে, ‘পেঁয়াজ পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে বলে রাধুনিকে পেঁয়াজ ছাড়াই রান্নার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।’

ঢাকা জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন ও মিশর থেকে বিমানে পেঁয়াজ আমদানি করছে। ভারতের রফতানি নিষিদ্ধের পর, বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকেও পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, প্রায় ১৫ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে বাংলাদেশ। প্রথম চালান বিমানযোগে ঢাকায় পৌঁছেছে ২০ নভেম্বর।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক কখনই পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। গত দশকে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় সঙ্ঘটিত অপরাধের দায়ে পাকিস্তানের নয়জন পিওডাব্লিউকে দোষি সাব্যস্ত করলে দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।

অতীতে ভারত নিজেও প্রতিবেশী পাকিস্তান থেকে আমদানি করেছে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আমলে পেঁয়াজের দাম যখন বেড়ে গিয়েছিল ভারতে তখন পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিল।

বার্তাবাজার/এইচ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর