কি ঘটতে যাচ্ছে আজ খালেদা জিয়ার ভাগ্যে?

বিএনপির নেতা-কর্মীসহ উৎসুক মানুষের দৃষ্টি আজ উচ্চ আদালতের দিকে। কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্যে কী ঘটছে তা নিয়ে তাদের এই দৃষ্টি। এমনকি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার জামিন প্রশ্নে আপিল বিভাগের আদেশের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও। বিএনপির সিনিয়র একাধিক আইনজীবী বলেছেন, মেডিকেল রিপোর্টে ‘উন্নত চিকিৎসা’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই যুক্তিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার জামিন মিলবে বলে আশা তাদের। জামিন না পেলে আদালতের ভিতরে-বাইরে গণবিক্ষোভের প্রস্তুতি রয়েছে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীসহ নেতা-কর্মীদের। সারা দেশেও একসঙ্গে বিক্ষোভের পরিকল্পনা আছে দলটির।

এদিকে মামলাটি আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকায় ৭ নম্বরে শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। বেগম জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৭৪ বছর-ঊর্ধ্ব বেগম জিয়া শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিলান মিয়া সরকার বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ মঙ্গলবার বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এসেছি। তিনি আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো। তবে তার হাতে, পায়ের জয়েন্টে ব্যথা রয়েছে। ডায়াবেটিস এখন গড়ে ১১। দাঁতের সমস্যা আর নেই। এগুলো আমরা লিখে দিয়ে এসেছি। এখন সর্বোচ্চ আদালতকে রিপোর্ট দেওয়া-না দেওয়ার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বেগম জিয়ার জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। সরকারের প্রতিহিংসার কোনো প্রশ্নই আসে না। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপেরও কোনো সুযোগ নেই।’ বেগম জিয়ার মামলার আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মানবিক কারণেই আপিল বিভাগ জামিন দেবেন। এ মামলায় কোনো সাক্ষী, তথ্য বা স্বাক্ষর কিংবা বেগম জিয়ার কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু তারপরও আমরা ওদিকে না গিয়ে শুধু মানবিক কারণে তার জামিন চেয়েছি। এই জামিনটা শুধু মানবিক কারণে। আদালতের উচিত হবে তার মুক্তি দেওয়া। আশা করছি, সর্বোচ্চ আদালত তাকে জামিন দেবেন।’

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সঠিক রিপোর্ট দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) রিপোর্ট চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বাংলাদেশের মানুষ এই প্রত্যাশা করবে পিজির চিকিৎসক, যারা মেডিকেল বোর্ডের দায়িত্বে রয়েছেন, তারা সত্য কথাটা বলবেন। আমরা অন্য কোনো কিছু চাই না।’ বিএনপির আইনজীবী নেতারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা। এর মধ্যে তিনি ৩৫টি মামলায় জামিনে রয়েছেন। শুধু দুটি মামলায় জামিনের অপেক্ষায় বিএনপি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ছাড়া অন্যটি হলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা। আজ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার জামিন হলে একই যুক্তিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাও জামিন পাবেন বলে আশাবাদী বেগম জিয়ার আইনজীবীরা। অন্য কোনো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না হলে বেগম জিয়ার মুক্তিতেও কোনো বাধা থাকবে না। বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, জামিন পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে পারেন বেগম জিয়া। সেখানে তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবস্থান করছেন। এর আগেও বেগম জিয়া লন্ডনে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বেগম জিয়ার আরেক আইনজীবী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জামিন পাওয়ার আশার কথা জানিয়ে বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আশা করছি, ম্যাডামের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় নেবেন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। আমরা আশা করি, মানবিক কারণে সরকার জামিনের বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।’

শোডাউনের প্রস্তুতি বিএনপির : বেগম জিয়ার জামিন শুনানিকে ঘিরে আদালতের ভিতরে-বাইরে শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আদেশ নেতিবাচক হলে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বিক্ষোভ করবেন আইনজীবী নেতারা। বাইরে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও বিক্ষোভ করবেন বলে জানা গেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, সমগ্র জাতি আজ দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ তার জামিনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি হবে। বেগম জিয়াকে বিনা অপরাধে ৬৬৫ দিন ধরে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অথচ তিনি নিশ্চিতভাবে এই জামিনের হকদার। আমরাও অপেক্ষায় আছি। আইনি প্রক্রিয়া দেখেই আমরা পরবর্তী কর্মসূচি দেব।

‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারের’ : কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ জানিয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতারা বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এত অসুস্থ যে কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া এমনকি শরীরের তীব্র ব্যথার কারণে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন না। যে কোনো সময় তিনি পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন। ড্যাব নেতারা বলেন, ‘খালেদা জিয়া সুচিকিৎসা পেলে এই অবস্থা হতো না। আমরা আশা করি, আদালত তাকে তার প্রাপ্য জামিন দিয়ে মুক্ত পরিবেশে তার পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেবে। অন্যথায় চিকিৎসক সমাজ নীরবে বসে থাকবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন গড়ে তুলব।’ গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম এসব কথা বলেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা : গত ২৫ নভেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ২৮ নভেম্বর দিন ঠিক করে। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন চেয়ে এ আপিল আবেদন করা হয়। গত বছরের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয় রায়ে। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ দন্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে জামিন আবেদনও করেন তিনি। আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করলেও তার জামিন আবেদন খারিজ করে হাই কোর্ট। পরে ১১ সেপ্টেম্বর ফের জামিন আবেদন ফেরত দেয় হাই কোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।

বার্তা বাজার/ডব্লিও.এস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর