প্রতিদিন তিন থেকে চারটি গরু একাই কাটেন জামিলা

বর্তমান সময়ে পিছিয়ে নেই নারীরা। পুরুষের সাথে সমান তালে লড়াই করছে। জামিলা (৪৭) যেন তার আরও একটি উদাহরণ। তবে কসাই হিসেবে স্বাবলম্বী জামিলার এখানে আসতে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরোতে হয়েছে।

প্রতিদিন তিন-চারটি, শুক্রবারে আট-দশটি গরুর মাংস নিজ হাতে কেটে বিক্রি করেন তিনি। ব্যবসায়ী জমিলা বেগমের মাংসের ক্রেতা দিনাজপুর জেলাসহ পাশের নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় জেলার মানুষ।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ৩ নম্বর শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী বাজার। এই গ্রাম্য বাজারের কসাই জমিলা। ২০ বছরের টানা অভিজ্ঞতায় এখন গরুর গায়ে হাত দিলেই বুঝতে পারেন, পশুটি সুস্থ নাকি রোগাক্রান্ত। অসুস্থ গরু শত অভাবে পড়েও কখনো কেনেননি তিনি। ফলে তার কোনো গরু কিনে আনার পর জবাইয়ের আগ পর্যন্ত অসুখে পড়ে কখনো মরেনি। জমিলা বেগম এখনো নিজে হাটে গিয়ে দেখে শুনে গরু কেনেন।

তার ‘মায়ের দোয়া মাংস ভাণ্ডার’ দোকানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মাংস হাঁড় থেকে আলাদা করে বিক্রি করা হয় এখানে। এরপর ডিজিটাল দাঁড়িতে মেপে বিক্রি করা করা হয়। বিয়ে বাড়ি, আকিকা, খতনাসহ আশপাশের গ্রাম-শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জমিলার দোকানের মাংস যায়।

দুই দশকের টানা অভিজ্ঞতায় তিনি ক্রেতাদের কাছে হয়ে উঠেছেন বিশ্বস্ত। এলাকায় এখন ‘জমিলা কসাই’ নামেই পরিচিত তিনি। নিজের কসাই হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে জমিলা বলেন, স্বামী কসাই হওয়ায় খুব কাছ থেকে তার কর্মকাণ্ড দেখা, তাকে সহযোগিতা করা আর সংসারের অভাবই আমাকে এই ব্যবসা শিখিয়েছে।

স্বামী জামিলাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। আর এরপর আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জামিলা নেমে পড়ে মাংসের দোকানে। ৫০ বছর বয়সী জামিলাকে ছেড়ে দিয়ে তার স্বামী যখন চলে যান তখন তার ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় তিন লাখ টাকা। ওই ঋণ পরিশোধ ও সন্তানদের ভরণপোষণ করতে তিনি এক সময় মাংসের দোকানে কাজ করতে শুরু করেন। তারপর নিজেই এই ব্যবসা শুরু করেন।

প্রথম দিকে অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কুসংস্কার ছড়িয়ে নালিশ করে আমার ব্যবসা বন্ধ করতে চেয়েছিল অনেকে, কিন্তু মায়ের প্রেরণায় সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে আমি টিকে আছি।

আত্মবিশ্বাসী জামিলা বলেন, কোনো পেশার পাশে লেখা নেই কোনটা ছেলে করবে, কোনটা মেয়ে করবে। সততার সঙ্গে ব্যবসা করে সফলতা পাওয়াটাই বড় কথা।

শতভাগ পেশাদার কসাই জমিলা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন রুটিন সম্পর্কে বলেন, প্রতিদিন সকালে মাছি মারার ওষুধ দিয়ে দোকানটি মাছি ও জীবাণুমুক্ত করি। কর্মচারীরা প্রতিদিন নিয়ম করে এই নির্দেশ পালন করে। পাশের দেবারুপাড়া গ্রামের পশু চিকিৎসক দিয়ে প্রতিটি গরু রোগমুক্ত আছে কি-না পরীক্ষা করা হয়। নিয়ম মেনে গরু মৌলভী দিয়ে জবাই করা হয়।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর