এমপি রমেশকে তেল না দেয়া সেই পাম্প বন্ধ করে দিল অনুসারীরা

পেট্রোল পাম্পগুলোয় ধর্মঘট চলাকালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনের গাড়িতে পেট্রোল না দেওয়ার জেরে সোমবার শহরের চৌধুরী ফিলিং স্টেশনে কেনাবেচা বন্ধ করে দিয়েছে সাংসদ রমেশপন্থী মোটর শ্রমিকেরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঠাকুরগাঁও সফর শেষে গতকাল বিকেলে ঢাকা যাওয়ার জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দরের পথে রওনা দেন রমেশ চন্দ্র সেন। পথে তাকে বহনকারী দুটি গাড়ি শহরের চৌধুরী ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল নেওয়ার জন্য যায়। কিন্তু ফিলিং স্টেশনের কর্মীরা ধর্মঘটের কথা বলে গাড়ি দুটিতে পেট্রোল দিতে অস্বীকৃতি জানান। সে সময় একটি গাড়িতে সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন বসে ছিলেন। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে আরেকটি ফিলিং স্টেশন থেকে পেট্রোল নিয়ে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

এ বিষয়ে গতকাল ‘ফিরে গেল এমপির গাড়ি, তেল দিলনা আন্দোলনরত শ্রমিকরা’ শিরোনামে বার্তাবাজারে সংবাদও প্রকাশিত হয়।

এ ঘটনায় আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পরিবহন শ্রমিকেরা চৌধুরী ফিলিং স্টেশনের সামনে এলোপাতাড়ি ট্রাক ও পিকআপ রেখে পেট্রোল বেচাকেনা বন্ধ করে দেন।

সাংসদ রমেশপন্থী পরিবহণ শ্রমিক এন্তাজুল হক বলেন, ‘এমপিকে অসম্মান করার জন্য এই পাম্প থেকে কোনো শ্রমিক ডিজেল-পেট্রোল কিনবে না।’

স্থানীয় ট্রাক, ট্যাংক, লরি, কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জয়নউদ্দীন বলেন, এলাকার এমপি নিজে একটি পাম্পে পেট্রোল নিতে গিয়েছেন। সেখানকার কর্মচারীরা তাকে পেট্রোল না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এটা করে ওই পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষ তাকে অসম্মান করেছে। এ ঘটনায় এমপির অনুসারী শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তাই তারা পাম্পটির যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে চৌধুরী ফিলিং স্টেশনের বিতরণকর্মী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এমপি স্যারের গাড়ি যখন এখানে পেট্রোল নিতে আসে, সে সময় অনেক মোটরসাইকেল আরোহী পেট্রোল নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তাদের পেট্রোল দিতে অস্বীকার করায় মোটরসাইকেল আরোহীরা এমপির গাড়ি দেখিয়ে বলতে থাকেন, দেখব তাকে (সাংসদকে) পেট্রোল দিচ্ছেন কি না। এ কথা শুনে জনরোষের ভয়ে আমরা এমপি স্যারের গাড়িতে পেট্রোল দিতে রাজি হইনি।’

বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ঠাকুরগাঁওয়ের সভাপতি এনামুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। কর্মবিরতি সমিতির সিদ্ধান্ত। এ কর্মসূচি চলাকালে এমপি সাহেবের গাড়ি পেট্রোল নিতে গেলে সে সময় অনেক ক্রেতার ভিড় ছিল। তাই বিতরণকর্মীরা এমপি সাহেবের গাড়িতে পেট্রোল দিতে রাজি হননি। পরে আমিই অন্য একটি পাম্প থেকে তাদের পেট্রোল নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিই। এখন শুনছি, ওই ঘটনা নিয়ে একদল শ্রমিক বিক্ষুব্ধ হয়ে পাম্পের কেনাবেচা বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি আর কী বলবো!’

এ বিষয়ে সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘পেট্রোল পাম্পে কর্মবিরতি চলছে এটা জানা ছিল না। সে কারণে ঢাকা যাওয়ার পথে ওই পাম্পে পেট্রোল নিতে যাই। কিন্তু আমাকে পেট্রোল দেওয়া হলো না। এতে আমার অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হতেই পারে।’

জ্বালানি তেল বিক্রির প্রচলিত কমিশন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে তিনটি গতকাল রবিবার সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করে ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি, পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতিসহ জ্বালানি ব্যবসায়ীরা। আজ বিকেল পর ওই কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর