বিদ্যালয়ে না এসে নিয়মিত বেতন তোলেন প্রধান শিক্ষক

চরফ্যাশন পৌরসভা দক্ষিণ ফ্যাশন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনজুর হোসেন স্কুলে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। স্কুলের হাজিরা খাতায় তিনি উপস্থিত দেখিয়ে সরকারি কোষাগারের নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একাধিকবার স্কুল পরিদর্শনকালে ওই প্রধান শিক্ষককে স্কুলে পাননি।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান প্রধান শিক্ষকের আপন ভ্রাতা। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর অনুপস্থিত ও নিয়মিত খাতায় স্বাক্ষর দেখিয়ে বিল ভাতা উত্তোলনের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৯৩ সনে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ১৯৯৮ সনে এমপিওভূক্ত হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৯ জন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর।

২০০৭ সালে প্রধান শিক্ষকের আপন ছোট ভাই মাহাবুবুর রহমান স্বপনকে সভাপতি করে ৩ বছরের জন্য ম্যানেজিং কমিটির গঠন করা হয়। ছোটভাই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এরফান হাসান মফিজ বরিশাল গিয়ে হাজিরা খাতাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, চিকিৎসা ছুটি নিয়ে প্রধান শিক্ষক মনজুর হোসেন পরিবারসহ বরিশাল অবস্থান করছেন।

পৌর ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান মনজু অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও পাঠদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

পারিবারিক ম্যানেজিং কমিটি এবং প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বেসরকারি চাকুরিবিধি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন।

সংশ্লিষ্ট স্কুলের বিল ভাতা প্রদেয় রূপালী ব্যাংক জিন্নাগড় শাখার ব্যবস্থাপক বলেন, বিল ভাতা উত্তোলন নিয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তার স্বাক্ষর নিয়ে অভিযোগ আগে আমার জানা ছিল না। সর্বশেষ অক্টোবরে ২৪ হাজর ৩৪০ টাকা তার হিসাব নম্বর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আগাম মাসিক বিল জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন চলতি বছরে ২৫ সেপ্টেম্বর অভিভাবক ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে উক্ত স্কুল পরিদর্শনকালে প্রধান শিক্ষক কাজী মনজুর হোসেনকে অনুপস্থিত পেয়ে তার বেতন ভাতা কর্তনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করেছেন।

চরফ্যাশন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াউল হক মিলন প্রধান শিক্ষকের বিদ্যালয়ে নিয়মিত অনুপস্থিতি ও পাঠদান কার্যক্রম ব্যহত হওয়ায় স্কুল পরিদর্শনকালেও প্রধান শিক্ষককের হাজিরা খাতায় ৫ দিন অনুপস্থিত পেয়েছেন।

এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন জানান, প্রধান শিক্ষকের কর্মস্থলে টানা অনুপস্থিতি ও অনিয়মের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান প্রধান শিক্ষকের নিয়মিত অনুপস্থিতি ও অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রধান শিক্ষক মনজুর হোসেন বলেন, পরিবার পরিজনসহ বরিশালে অবস্থানের কারণে নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারি না। তবে এ যাবত বিল বেতনসহ প্রাতিষ্ঠানিক কাজে স্বাক্ষর তার নিজের বলে স্বীকার করেন। প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে কোনো দুর্নীতি ও অনিয়মে আশ্রয় নেননি। বছরের পর বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির অভিযোগ সত্য নয়।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর