এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শীর্ষে ভারত, বাংলাদেশের ১০ম

আজ পহেলা ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন শুরু হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান। এতে জানানো হয়েছে, দেশে গত এক বছরে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২০ জন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ, এইচ আই ভি এইডস এর লাইন ডিরেক্টর ডক্টর সামিউল ইসলাম সাদীসহ অন্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ২৩টি জেলা বেশি এইডস ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৫৪ জনকে এইচআইভি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পর্যন্ত মারা গেছে ১৪০০ জন। বাংলাদেশে মাসে একজন এইডস আক্রান্ত রোগীর পিছনে সরকারের খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। গেলো বছর ১০২০ জন নতুন রোগী সনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৫ জন রোহিঙ্গা। মারা গেছেন ১২৭ জন। যেসব জেলা এইডস-এর ঝুঁকিতে এগুলো হচ্ছে- ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেট, মৌলভাবাজার, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুরা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ও সাতক্ষীরা।
সূত্র জানায় জানান, বর্তমানে দেশে চিকিৎসা সেবা ও এইচআইভি শনাক্তকরণ কার্যক্রম সরকারি ১২টি হাসপাতালের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে ৪টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এইডস নিয়ে কাজ করেন এমন একটি সংগঠন ‘আশার আলো সোসাইটির’ পরিচালক হাবিবা আক্তার জানান, দাতা সংস্থাগুলোর কিছু সংখ্যক বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সরকারি হাসপাতালে এই ব্যাপারে কাজ করছে। এর বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। এইডসবিষয়ক আরেকটি সংগঠন ‘মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ’। এই সংগঠনটি ৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এই রোগী সনাক্ত করে।

জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক শাখার এক তথ্য মতে, সারা বিশ্বে ৩ কোটি ওপর মানুষ এইডস আক্রান্ত। ২০১৪ সালে ২০ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশু এইডস আক্রান্ত হয়েছে। ২০০০-১৪ সাল পর্যন্ত এন্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ৭০ লাখ ৮০ হাজার এইডস আক্রান্ত মানুষকে বাঁচানো গেছে। ২০১৪ সালে ২ লাখ ২০ হাজার শিশু নতুন করে এইডস আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের এন্টি রেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ১০ লাখ ৪০ হাজার শিশু সুস্থ হয়েছে। ২০১৪ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নতুন করে এইডস আক্রান্ত হয়। ২০০০-১৪ সাল পর্যন্ত নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার অনুপাতে যা ৩১ শতাংশ কম। এইডস’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব সমপ্রদায় ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ মরণঘাতি রোগে মৃত্যুবরণ করেছে বিশ্বে।

এইচআইভি নিয়ে কাজ করে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইডস ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, এশিয়ার দেশগুলোতে প্রাণঘাতী এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের অবস্থা ১০ম। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত।

একজন মানুষের থেকে অন্য মানুষের শরীরে এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় : এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। এই তিনটির বাইরে কোনো পদ্ধতি নেই। একটি হলো, দুজন মানুষের শারীরিক মিলনের মাধ্যমে হচ্ছে। দ্বিতীয়, ইনজেকশনের মাধ্যমে হতে পারে, ইনজেকশন যদি শেয়ার করে বা রক্ত দেয়ার মাধ্যমে হতে পারে। তিন নম্বর হচ্ছে, মায়ের থেকে সন্তানের হতে পারে। মা যদি এইচআইভি পজিটিভ হয়, তখন এটি হতে পারে, তাও এর সম্ভাবনা খুব কম। ১০০ ভাগের এক ভাগও নয়, দশমিক পাঁচ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। এই দশমিক পাঁচ শতাংশের মধ্যে পড়ে গেলে সন্তানও এইচআইভি পজিটিভ হতে পারে। যৌন কার্যক্রমের মধ্যে নারী, পুরুষ, সমকামীদের মধ্যে ছড়িয়ে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার হার বেশি বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস বিষয়ক কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এইডস রোগীর সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা এখন ১২টি সেন্টার থেকে সুবিধা নিতে পারছেন। প্রিভেনশন ওয়ার্ক এবং ট্রিটমেন্ট বা শনাক্তকরণ করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকার ফ্রি ওষুধ দিচ্ছে। মায়েরা যাতে সুস্থ বাচ্চা দিতে পারেন, এমন কর্মসূচিও রয়েছে তাদের। তিনি জানান, দেশে এই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ হাজার। মারা গেছেন ১৪০০ জন। এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বিশ্ব এইডস পালন করা হচ্ছে।

বার্তাবাজার/এইচ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর