ঘুমের মধ্যেই ছবি আঁকেন তিনি

পৃথিবীতে অনেকেই অনেক ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এর সাক্ষ্যও রেখে যান বিভিন্ন ক্ষেত্রে। মনুষ্য প্রতিভার এক অনন্য দিক ছবি আঁকা। অনেকেই আছেন যেকোনো ছবি এঁকে ফেলতে পারেন চোখের পলকেই। তবে চোখে না দেখে ঘুমিয়েই ছবি আঁকার কথা কি শুনেছেন কখনো?
না দেখে, কোনো কিছু কল্পনা করে ছবি আঁকার কথা বলছি না। বলছি একেবারে চোখ বুজে, ঘুমের ঘোরে একের পর এক অনবদ্য ছবি এঁকে ইতোমধ্যে দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেয়া এক শিল্পীর কথা। অবাক হচ্ছেন? ঘুমের ঘোরে হেঁটে চলে বেড়ানো, কথা বলা, চিৎকার করার কথা আমরা হয়তো অনেকেই শুনেছি। তবে ঘুমের ঘোরে, অবচেতনে এভাবে ছবি আঁকার ঘটনা অবাক করেছে বিশ্বের তাবড় মনোবিজ্ঞানীদেরও!

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিভাবান এই শিল্পীর নাম লী হ্যাডউইন। তাকে নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন বিশ্বের অনেক বড় মনোবিজ্ঞানীরা। তবে এভাবে ছবি আঁকার বিষয়টি আজো রহস্যের চাদরে মোড়া। ৪৪ বছর বয়সী হ্যাডউইনের জন্ম ইংল্যান্ডের ওয়েলসে। মাত্র চার বছর বয়সে হঠাৎ একদিন ঘুমের মধ্যেই রং হাতে দেয়ালে আঁকতে শুরু করেন হ্যাডউইন।

প্রথম দিকে হ্যাডউইনের পরিবারের লোকজন এবং হ্যাডউইন নিজেও ব্যাপারটি বুঝে উঠতে পারেননি। ঘুমের মধ্যে ছবি আঁকা, কীভাবে সম্ভব! তবে কয়েক বছর পর হ্যাডউইনের ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ছবি আঁকার ব্যপারটি সবার কাছে অন্যান্য স্বাভাবিক ঘটনার মতোই হয়ে গিয়েছিল। হ্যাডউইন নিজেও তার এমন কর্মকান্ডে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিলেন।

অনেক বছর পর হ্যাডউইন যখন দেয়াল থেকে কাগজে আঁকতে শুরু করেন। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পান তার পাশে একটি কাগজে হলিউড অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর একটি স্ক্যাচ রয়েছে। চমৎকার স্কেচ, চারকোলের নিখুঁত স্ট্রোক! ছবিটি দেখেই মুগ্ধ হয়ে যান তিনি নিজেই। পড়ে বুঝতে পারেন ঘুমের মধ্যে তিনিই একেছেন এটি।

শেষমেশ মনোবিজ্ঞানীরাও মেনে নিয়েছেন, হ্যাডউইনের বিষয়টি একেবারেই ‘আলাদা’। মনোবিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের মতে, ছোটবেলার কোনো ঘটনা থেকে তৈরি হওয়া ভয় বা আঘাতের ফলে একরকম মানসিক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ইংল্যান্ডের ওয়েলসের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পেনি লুইস জানান, ঘুমন্ত অবস্থায় মস্তিষ্কের যৌক্তিক অংশটি নিষ্ক্রিয় থাকলেও লিম্বিক সিস্টেম (মস্তিষ্কের যে অংশটি মানুষের আবেগ, প্রতিক্রিয়ায় বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে) সক্রিয় থাকে।

অধ্যাপক লুইসের মতে, ঘুমন্ত অবস্থায় হ্যাডউইনের মস্তিষ্কের লিম্বিক সিস্টেম অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। আর এজন্যই ঘুমন্ত অবস্থায়ও এমন অসাধারণ ছবি আঁকতে পারেন হ্যাডউইন। এডিনবার্গ স্লিপ ক্লিনিকে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা হ্যাডউইনের বাবা-মাকে জানান এভাবে ছবি আঁকার ফলে তার শরীরের তেমন কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। ফলে নিশ্চিন্তে ছবি আঁকা চালিয়ে যেতে পারেন হ্যাডউইন।

চিকিৎসকরা অভয় দেয়ার পর থেকে আর এ বিষয়ে চিন্তা করেননি হ্যাডউইন। এ পর্যন্ত ৬০০ বা তারও বেশি ছবি একেছেন তিনি। বেশ চড়া দামে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের একাধিক প্রদর্শনীতে বিক্রিও হয়েছে তার আঁকা ছবিগুলো। পরবর্তীতে হ্যাডউইন চাকরি ছেড়ে দেন। নির্ভরশীল হন নিজের আঁকা ছবি থেকে হওয়া উপার্জনের উপরই। আর হবেন না-ই বা কেন! তার আঁকা কোনো কোনো ছবি প্রায় তিন থেকে চার হাজার ইউরোয় বিক্রি হয়। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত।

বর্তমানে চিত্রশিল্পী হিসাবে যথেষ্ট নাম-ডাক হয়েছে হ্যাডউইনের। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংগ্রহেও রয়েছে হ্যাডউইনের আঁকা ছবি। সম্প্রতি হ্যাডউইনকে নিয়ে ইউরোপের এক সংবাদ মাধ্যমে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। যার নাম ‘স্লিপওয়াকার সিক্রেটস অব দ্য নাইট’। তবে এখনো লী হ্যাডউইনের এভাবে ছবি আঁকার বিষয়টি বিস্মীত করে বিশ্বের নামী চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীদের।

 

বার্তা বাজার/এম.সি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর