অসুস্থতায় ঘুরেনি রিকশা’র চাকা, তাই না খেয়েই দিনপার সেই রিক্সাচালকের পরিবারের

বলছিলাম রিকশা চালক কামরুজ্জামান এর কথা। বয়স ৬৫ এর উপরে, শরীরের শক্তিও লোপ পেতে শুরু করেছে।প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি আর জীবন বাঁচানোর তাগিদে, প্যাডেল চেপে চলেছেন কামরুজ্জামান। ইচ্ছে না থাকলে ও অন্যকর্ম জানেন না বলেই, বৃদ্ধ বয়সে টানতে হচ্ছে রিক্সার মত কায়িক শ্রমের বাহন। “শরীর বলে থাম এবার, জীবন বলে বাঁচবি কি আর?” কর্ম থামিয়ে দিলেই যে বৃদ্ধ বয়সে না খেয়ে মরতে হবে, সে চিন্তার দরুন, চালাচ্ছেন রিক্সা।

ছবি: বার্তা বাজার

বললেন ভিক্ষা করবো না যতক্ষণ প্রাণ আছে। জীবনের কঠিন একটি মুহুর্তের মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছেন । বউ, সন্তানাদি নিয়ে তাঁর কষ্টের সংসার। রিক্সা চালান ঠিকই;কিন্তু কানে শুনেন না বলে অনেকেই রিক্সায় উঠতে চান না। থাকেন রাজধানী ঢাকার নবীনগর, মোহাম্মদপুর এলাকায় । গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার কোতয়ালী থানা। ঢাকায় আসছেন ১৯৮৮ সালে। রিকশা চালিয়েই সংসার চালাচ্ছেন। তার পরিবারে ৫ মেয়ে এক ছেলে । দুই মেয়ে (বিউটি,শাকিলা) চাকরি করে টায়ার কোম্পানিতে। বাকি বড় মেয়ে অসুস্থ , দুই মেয়ে ছোট এবং এক ছেলে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে আর টাকার অভাবে পড়তে পারেনি। তবে বিউটি ও শাকিলা যে টাকা পায় তা খুবই সামান্য। এমন যে বাড়ি ভাড়াতেই চলে যায় সবটাকা। রিকশা চালিয়ে যা টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে দিন এনে দিন খাওয়ার মতো । প্রতিদিন সকাল হলেন ঢাকা উদ্যান থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় রিকশা চালান তিনি।

গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও কামরুজ্জামান রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। আজ যখন শয়ন থেকে বসার সক্ষমতা কমে গেলো তখন রিকশার চাকা আর ঘুরলনা, তাই দুপুরে আর চুলায় রান্নাও হলো না। নিজের কষ্টের কথা ‘বার্তা বাজার’কে বলতে গিয়ে তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। কথা বলতে পারেন না ঠিকমতো, কানে পানি জমা রোগ। বললেন চালের দোকানে বাকি ১৩ হাজার টাকা, অন্য আরেকজন পাবেন ৩০ হাজার টাকা, ছোট মেয়ে মিতুর স্কুল পড়ার বেতন পাবে ৩০০০ টাকা। পাওনাদাররা টাকার জন্য প্রতিদিন চাপ দিচ্ছেন। তাই তিনি এখন নি:স্ব।

ছবি: বার্তা বাজার

কখনো ক্লান্তি ঘিরে ধরলে ও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে পিছ পা হননি তিনি।সমাজে যখন অনেকেই লোভের বশে অন্যায় পথ বেছে নেন, ঠিক তখন এই বৃদ্ধ রিক্সা চালক সৎ পথেই তাঁর জীবিকা নির্বাহের সন্ধান করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। অচিরেই যদি সরকার, কোন সংস্থ্যা কিংবা সহৃদয়বান ব্যক্তি কামরুজ্জামানের পাশে এসে দাড়াতেন, তবে হয়তো আর বৃদ্ধ বয়সে রিক্সার প্যাডেল চাপতে হতো না।যে বয়সে নাতী-নাতনীদের সাথে খোঁশ গল্প করে কাঁটাতে ব্যস্থ থাকার কথা ছিলো, কিন্তু ভাগ্য তাকে পথে নামিয়ে ছেড়েছে।রৌদ্র কি বৃষ্টি, রিক্সার প্যাডেল চেপেই চলেছেন বৃদ্ধ রিক্সাচালক কামরুজ্জামান।

 

বার্তা বাজার/এম.সি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর