ঝিনাইদহের দুদুলতা ধানের আবিষ্কারক ইমদাদুল হক দুদুর সাফল্য

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালুহাটি গ্রামের ইমদাদুল হক দুদু ২০১১ সাল থেকে ধান অবিষ্কারের কার্যক্রম শুরু করেন। সর্বপ্রথম তিনি সুবল লতা ধান থেকে একটি ধান উদ্ভাবন করেন। ওই ধান থেকে তিনি দুদু লতা পোলাও ধান উদ্ভাবন করেন।

গত বছর তিনি প্রায় ২ একর জমি থেকে দুই লক্ষাধিক টাকার ধান ও বীজ বিক্রয় করেন। আগামীতে দুদু লতা ধান থেকে আরও তিনটি উন্নত জাতের ধান উপহার দিতে পারবেন। এ থেকে পোলাও চাউলের ধান সুলভ মূল্যে বাজারে বিক্রয় হবে বলে আশাবাদি তিনি। এই ধানের বীজ আগামীতে চাষাবাদ করবেন বলে জানান সাধারণ কৃষকেরা।

জানা যায়, ২০১২ সালে সদর উপজেলার কালুহাটি গ্রামের কৃষক ইমদাদুল হক দুদু মিয়া সুবল লতা ধানের মধ্যে নতুন জাতের ধানের তিনটি গোছা আবিষ্কার করেন। প্রাথমিকভাবে দুই বছর পরিচর্যার পর ওই ধানের বীজ তৈরি করে নিজের জমিতে আবাদ শুরু করেন তিনি।

রোগবালাই-সহিষ্ণু ওই ধানের জাতটি উচ্চতায় খাটো হওয়ার কারণে ঝড় বা বাতাসে হেলে পড়ে না। পোকা-মাকড়ের আক্রমণও হয় কম। গত ২০১৭ সালে দুদু মিয়া তিন বিঘা জমিতে ১০০ মণ ধান উৎপাদন করেন। এ বছরও ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে।

নতুন জাতের এ ধানের প্রতিটি শীষে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০টি পর্যন্ত পুষ্ট ধান হচ্ছে, যা অন্যান্য ধানের শীষের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। ধান গাছের উচ্চতা কম হওয়ায় ঝড়ো বাতাসে হেলে পড়ে না। এ ছাড়া এ ধানে রোগবালাই নেই বললেই চলে। এ ধানের গোছায় চিটা হয় না, তাই ফলন ভালো হচ্ছে।

ধান থেকে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে, তা দেখতে অনেকটা বেগুনের বিচির মতো। স্বাদও ভালো। দামও ভালো পাওয়া যায়। গত বছরের সাফল্যে পর এ বছর ধানের আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষক দুদু মিয়া বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মাঝে ধানের বীজ সরবরাহ করেন। এই মৌসুমে ওই সব জমিতে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোফাকখারুল ইসলাম বলেন, নতুন ধানের জাতের উদ্ভাবক কৃষক দুদু মিয়াকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।

ধান উৎপাদনে সার, সেচ, আগাছা দমনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়াবলি আমাদের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। ধানটি দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এবারো ধানটির ফলন গতবারের মতো আশানুরূপ হবে। জাতটির চাল চিকন, ভাত খেতে সুস্বাদু, ধানের বাজারমূল্য অপেক্ষাকৃত বেশি, ফলনও ভালো। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ জাতের ধানটি নিকট ভবিষ্যতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।

নড়াইল জেলার কৃষক আব্দুল কায়েস, সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পাওয়া গ্রিন চাষি মো. ইদ্রিস আলী, শৈলকুপা উপজেলার ভাটই গ্রামের সাহেব আলীসহ একাধিক কৃষক জানান, দুদু মিয়া কয়েক বছর ধরে নতুন ধানের আবাদ করছেন। অন্যদের জমিতে কোনো কারণে ধানের ফলন কম হলেও কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি তার নতুন জাতের ধানে ফলন ভালো হচ্ছে। তাই এ বছর তার কাছ থেকে বীজ ধান নিয়ে আবাদ করেছি। ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। ধান বর্তমানে থোড় অবস্থায় আছে। পাশের ক্ষেতে অন্য জাতের ধানের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো বলে মনে হচ্ছে।

কৃষক ইমদাদুল হক দুদু মিয়া বলেন, গত বছর ধানের ফলন ভালো পেয়েছিলাম। এ ধান ঝিনাইদহের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আমি এ বছর ১ হাজার কেজি ধানের বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছি। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক দুদুলতা ধানের আবাদ করছেন। সরেজমিন কৃষকের ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখেছি, আমার কাছ থেকে নেয়া ধান বীজের ক্ষেতে ধানের অবস্থা অত্যন্ত ভালো আছে। আমি আশা করছি তারাও আমার মতো ফলন পাবেন। অনেক কৃষক ইতোমধ্যে আমার কাছে অগ্রিম বীজের চাহিদা জানিয়েছেন। কাজেই এ বছরের তুলনায় আগামী বছর এ ধানের আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা করছি। চলতি মৌসুমে তিনি আবাদ বৃদ্ধি করে ৫ একর জমিতে তিন প্রজাতির ধানের চাষ করবেন বলেও জানিয়েছেন। প্রয়োজনে এই মোবাইল ০১৯৭১-৪৭৪৭১৫ যোগাযোগ করুন।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জি এম আব্দুর রউফ জানান, দুদু লতা ধান প্রতি শতকে গড়ে এক মন ফলন হচ্ছে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক কৃষি অফিস খোজখবর রাখছেন।

বার্তাবাজার/এমকে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর