মুরগী বিক্রেতা থেকে ভাইরাল রাঁধুনি (ভিডিওসহ)
আপনি হয়তো ইউটিউবে দেখে থাকবেন এক বৃদ্ধ রাঁধুনিকে। যিনি খোলা জায়গায় বিভিন্ন পদের রান্না করেন। তার রান্নার বিশেষত্ত্ব হলো, তিনি সবকিছুই সংখ্যায় একশোটি করে রান্না করেন। যেমন- একশোটি চিকেন, মাছ, ডিম ইত্যাদি। তার একটি ভিডিও প্রায় ৯ কোটি বার দেখা হয়েছে। ইউটিউব চ্যানেলটির নাম ভিলেজ ফুড ফ্যাক্টরি। তার নাম জয়মুখ গোপিনাথ। তিনি রান্নায় অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তি।
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রমানাথপুরাম জেলার কালায়ুর গ্রামের একজন বাসিন্দা। তিনি পেশায় যদিও একজন মুরগী বিক্রেতা। তবে সেটা কাঁচা মুরগী নয় রান্না মুরগী। গোপিনাথের ছেলে আরুমুগাম একজন অপেশাদার চিত্রনির্মাতা। তিনিই বাবার মুরগী বিক্রির দৃশ্য ভিডিও করেন। এরপর সেই ভিডিও তিনি কিং অব চিকেন লেগস/ ১০০ চিকেনের ব্যবহার/ আমার বাবার তৈরী এসব নাম ব্যবহার করে ইউটিউবে আপলোড করেন। গোপিনাথের রান্নার ভিডিওটি আপলোড করার পর থেকে মানুষের দেখার পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে।
আরুমুগাম হয়তো কখনো ভাবেনি যে তার বাবা ইউটিউবের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি হবে। প্রথমে তিনি তামিল সিনেমাতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তীতে তিনি অনেকটা শখের বশে বাবার ভিডিও বানিয়ে সেগুলো প্রকাশ করতে শুরু করেন। বর্তমানে জয়মুখ ইউটিউবের একজন নামকরা রাঁধুনি। যার রান্না প্রায় অনেকেই অনুকরণ করেন।
জয়মুখ গোপিনাথ যে গ্রামটিতে থাকেন সেখানকার একটি বিশেষত্ব আছে। সেটি হলো গ্রামটির পুরুষেরা রান্নায় অত্যন্ত পারদর্শী। গ্রামটির পুরুষেরা যেমন ভোজনরসিক তেমনি খুব দক্ষ রন্ধনশিল্পী। কালায়ুরে ঢোকা মাত্রই ভেসে আসে বিভিন্ন ধরনের মসলার সুগন্ধ। দক্ষিণ ভারতে এই গ্রামটি ভোজনরসিকদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। কালায়ুর বিশেষত্বই হল সেখানকার প্রতিটি বাড়িতে রান্নায় পারদর্শী কেউ না কেউ আছে। পুরো ভারত জুড়ে সেরা ২০০ জন রন্ধনশিল্পীর বসবাস এই গ্রামে।
প্রায় ৫০০ শতাব্দী আগে এই অঞ্চলের ধনী বণিক সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা নিম্ন বর্ণের ভানিয়ার গোষ্ঠীকে রান্নার কাজে নিয়োগ দেয়। কারণ তারা রান্নায় দক্ষ ছিল। ব্রাক্ষ্মণ রন্ধনশিল্পীদের তুলনায় ভানিয়াদের বানানো খাবারের সুনাম বেশি ছিল। তখনকার সময়ে কৃষিকাজ খুব একটা লাভজনক ছিলনা। পুরুষদের অন্য কোনো কাজে দক্ষতা না থাকায় রান্নার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ে। তাদের খাবার তৈরীতে পারদর্শীতার ঐতিহ্য তখন থেকেই শুরু হয়।
কালায়ুর গ্রামের পুরুষ রন্ধনশিল্পীদের জনপ্রিয়তা পুরো দক্ষিণ ভারত জুড়ে। বছরের ছয় মাস তারা বিভিন্ন জায়গায় রান্নার কাজ করে। বিয়ে, জন্মদিন এবং অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠানেও এই গ্রামের পুরুষদের রান্নার জন্য ডাকা হয়। তারা রান্নায় প্রয়োজনীয় সকল উপাদান হাতের কাছে পেলে তিন ঘণ্টার মধ্যে এক হাজার লোকের খাবার তৈরী করতে পারে।
যে গ্রামে সব পুরুষই রান্নায় পারদর্শী সেখানে রন্ধন শিল্পীদের সুনাম কুড়ানো খুব সহজ নয়। এখানকার খাবার উচ্চ মানের হতে হয়। রান্না শেখার জন্য পুরুষদের বয়সের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। তবে সেখানকার পুরুষেরা অল্প বয়সেই প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। মাঠ থেকে শাক-সবজি কাটা, রান্নার বাকি উপাদান সংগ্রহ করা থেকে শুরু হয় প্রাথমিক পর্যায়ের প্রশিক্ষণ। এভাবে বিভিন্ন ধাপ পার করার পর একজন রান্নায় পারদর্শী হয়। কমপক্ষে ১০ বছর এই চর্চা অব্যাহত রাখতে হয়।
তামিলনাড়ুর আশেপাশের রাজ্যে ঘুরতে গেলে কালায়ুর গ্রামের পুরুষদের হাতের রান্না খেতে বিভিন্ন পর্যটক ভিড় জমান সেখানে। তাই জায়গাটিকে এখন ভ্রমণপিপাসুদের একটি অন্যতম আকর্ষণ কেন্দ্র বলে অভিহিত করলে ভুল হবেনা। জয়মুখের রান্নার ভিডিও দেখুন এখানে…
বার্তা বাজার/এম.সি