অনুষ্ঠানে আসতে লজ্জা করে, জানাজায় তো দাওয়াত লাগে না

‘একজন শিল্পী হিসেবে নিজের কর্মস্থল এফডিসিতে এসে আমরা সম্মান পাই না। অপমানিত হই। আমাদের টেলি ভাই সবাইকে ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। তার মধ্যেও এমন হতাশা ছিল। অনেক আক্ষেপ ছিল তার মনে।’ বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদের জানাজায় এসে এসব কথা বলেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাসরিন।

রবিবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) তে দুপুর ১২.৩০ মিনিটে টেলি সামাদের জানাজা সম্পন্ন হয়। এর আগে ফুল দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থলের শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

টেলি সামাদের জানাজায় এসে স্মৃতিকাতর নাসরিন বলেন, ‘টেলি ভাই যেমন গুণী অভিনেতা ছিলেন, তেমনি ছিলেন ভালো মানুষ। কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন না। সবার সঙ্গে মিশতেন, ভালো ব্যবহার করতেন। আর সবচেয়ে বড় কথা কারও মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলতেন না। ‘রূপনগরের রাজকন্যা’ ছবিতে আমি প্রথম কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করি। এই ছবিতে আমি জুটি বেঁধে অভিনয় করেছি টেলি ভাইয়ের সঙ্গে। আর এই ছবিতে আমাদের একটি গানও ছিল। সবাই আমাকে জানে দিলদার ভাইয়ের সাথে কাজ শুরু করি। কিন্তু আমার শিশু শিল্পীর পর প্রথম টেলি ভাইয়ের সাথে কাজ করি। একসাথে কয়েকটা কাজ করেছি। এরপর জুটি বাঁধি দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে।’

মনে কষ্ট নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখন এফডিসিতে কোনো অনুষ্ঠান হলে আমরা দাওয়াত পাই না। জানাজা বা দোয়া হলে দাওয়াত ছাড়া আসা যায় এবং সব সময় আসি। কিন্তু অনুষ্ঠানে আসতে লজ্জা করে। তারপরও এই এফডিসিতে সারা জীবন কাজ করেছি। যে কারণে স্বামী-সন্তান নিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠানে গত ৪ এপ্রিল এফডিসিতে এসেছিলাম। সেখানে যেভাবে অপমান করা হলো, তখনই মরে যেতে ইচ্ছে করেছিল।’

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে নাসরিন বলেন, ‘আমি যখন স্বামী-সন্তান নিয়ে অনুষ্ঠান দেখার জন্য চেয়ারে বসেছি, তখন শিল্পী সমিতির এক নেতা সিকিউরিটিকে ইশারা করে আমাকে তুলে দিতে বলেন। সিকিউরিটি মনে হয় আমাকে চিনেছে, তাই তিনি আমাকে আরেকটু পেছনে বসতে বলেন। আমি তিন নম্বর সিরিয়ালে গিয়ে বসি। তার কিছুক্ষণ পর আবার সেই নেতা আবারও আরেকজন সিকিউরিটিকে আমাকে দেখিয়ে কিছু বলেন। তারপর সিকিউরিটি এসে আমাকে দর্শক সারিতে বসতে বলেন। সেখানে উঠে গিয়ে দেখি কোনো সিট খালি নেই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে যাই।’

‘চলচ্চিত্র দিবসে যাঁরা মঞ্চে নাচ করেছেন, আমি নাসরিন এঁদের অনেকের চেয়ে বেশি ছবিতে কাজ করেছি। সারা দেশে অনেক অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে দাওয়াত পাই, সেখানে গেলে সম্মানও পাই। অথচ এফডিসি বা শিল্পী সমিতিতে এলে মনে হয় আমরা কেউ না। তখন আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না।’

চলচ্চিত্রের নানা কলাকুশলীসহ আজ টেলি সামাদের জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য সচিব আবদুল মালেক, অভিনেতা আলমগীর, ফারুক, অমিত হাসান, জায়েদ খান, সম্রাট, অঞ্জনা, আলীরাজ, মুশফিকুর রহমান গুলজার, খোরশেদ আলম খসরু, ফকির আলমগীর, দেলওয়ার জাহান ঝন্টু, শাহ আলম কিরণ প্রমুখ ব্যক্তি।

গতকাল চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শনিবার দুপুর দেড়টায় টেলি সামাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর