মায়ের স্তন ক্যান্সার, শিশুকে দিলেন না বুকের দুধ

মা হওয়ার স্বপ্ন সব নারীই দেখেন! অনেকেরই স্বপ্নটি সত্যি হয় আবার অনেক নারীই মা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত হন। সবই আসলে নিয়তির খেলা! আজ যার গল্পটি শুনবেন তিনি সদ্য মা হয়েছেন। এটিই তার জীবনের সবচেয়ে খুশির সংবাদ। তবে তার সব খুশি ম্লান করে দেয় জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের সংবাদটি। সন্তান জন্ম দিলেন ঠিক কিন্তু শিশুকে তিনি পান করাতে পারেননি বুকের দুধ।

আমেরিকার ওকলাহোমার বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী ব্রুক টেইলর। একটি ফুটফুটে কন্যার জননী তিনি। তবে সন্তান জন্মের দিনই তিনি জানতে পারেন তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। যদিও গর্ভকালীন সময়ে তিনি স্তনে বেশ অস্বস্তি ও ব্যথা অনুভব করতেন। ডাক্তার অবশ্য বিষয়টিকে গর্ভধারনের লক্ষণ বলে অভিহিত করেন। তাই এ বিষয়ে টেইলর অতটা মাথা ঘামান নি।

ছবি: সংগৃহীত

তবে বিপত্তি সাধে ছয় মাসের গর্ভাবস্থায়। টেইলরের তখন ৩৮ সপ্তাহ চলছে। আল্টাসাউন্ড এবং বায়োপসি করে জানা গেল তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার ডান স্তনে দু’টি এবং বাম স্তনে একটি টিউমার ধরা পড়ে। ক্যান্সার তার দুধ নালীতে প্রবেশ করেছে। এমতাবস্থায় টেইলরের পৃথিবী যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল মুহূর্তেই।

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, প্রতি আটজন মার্কিন নারীর মধ্যে একজন তার জীবদ্দশায় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বয়স্ক, স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। টেলরকে বলা হয়, তিনি (ব্রেস্ট ক্যান্সার) বিআরসিএ-১ জিন বহন করছেন। যার ফলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো সেই মুহূর্তেই সিজার করার সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাকে। সন্তানের কথা চিন্তা করে টেইলর রাজি হলেন। এক-দুই নয় টানা ছয় ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর টেইলরের প্রথম সন্তান এলসি জেমস জন্ম নেয়। ৬ পাউন্ড ২ আউন্স ওজনের সুস্থ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন এই সাহসী মা। তাও আবার কোনো রকম জটিলতা ছাড়াই।

ছবি: সংগৃহীত

এক আন্তর্জাতিক গণমাধমে দেয়া সাক্ষাৎকারে টেইলর বলেন, টেস্টের রিপোর্ট যখন হাতে পায়, আমার স্বামী সেটি প্রথমে পড়েই ঢুকরে কেঁদে ওঠে। আমি অবশ্য কাঁদিনি। আমার সন্তানের কথা চিন্তা করে আমার একটুও কান্না পায়নি। আমি সত্যি ভাগ্যবান যে এতো মিষ্টি একটি মেয়েকে জন্ম দিয়েছি। জানিনা কয়দিন বাঁচবো কিন্তু মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ তো হয়েছে। আমার সন্তান যেন বেঁচে থাকে দীর্ঘদিন, ইশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা রইল।

টেইলর এখন প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই করছেন। যদিও হাসপাতালের বিছানাতেই কাটে তার বেশিরভাগ সময়। কেমোথেরাপি নিতে হচ্ছে নিয়মিত। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত তিনি মোট ১৬ টি কেমোথেরাপি নিয়েছেন। কেমোথেরাপির প্রভাবে টেলরের মেনোপজও ঘটেছে।

পরবর্তীতে ডাবল মাস্টেকটমি, রেডিয়েশনও নিয়মিত নিতে হবে তার। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াকু এই মা অন্যান্য ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। আর তাইতো নিয়মিত ইনস্টাগ্রামে টেইলর সরব। তার ও মেয়ের ছবি আপলোড করে এবং বিভিন্ন উৎসাহমূলক পোস্ট শেয়ার করে অন্যদের সাহস জোগাচ্ছেন। সূত্র: ডেইলি মেইল

 

বার্তা বাজার/এম.সি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর