বৈশাখী ভাতা গ্রহণ করা কি জায়েজ?

বৈশাখের ভাতা বা উপঢৌকন গ্রহণ করা যাবে কি? সাহাবায়ে কেরাম তথা খেলাফতের যুগে ইসলাম বিরোধী সাংস্কৃতিক উৎসবের উপঢৌকন গ্রহণে কি নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছিল? ইসলাম এ বিষয়ে কী বলে? আসুন জেনে নেয়া যাক।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি অথবা বেসরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য দেয়া ভাতা গ্রহণ করা জায়েজ নাকি জায়েজ নেই। এ বিষয়টি জানার আগে একটি সাধারণ কথা জেনে রাখা জরুরি। আর তাহলো-

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রচলিত মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ যত প্রকার সংস্কৃতি আছে এ সব সংস্কৃতিগুলো মূলত সুনির্দিষ্ট একটি বিশেষ ধর্মের মানুষের ধর্মীয় সংস্কৃতি।

আর একজন মুসলমানের জন্য অন্য কোনো ধর্মের মানুষের ধর্মীয় কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি অথবা তার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কোনো কিছুকে গ্রহণ করা কোনো অবস্থাতেই জায়েজ নেই। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাস হাদিসে পাকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে জাতি বিজাতীয় সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদের দলভূক্ত হবে।’ (আবু দাউদ)

আর বর্তমান সময়ে প্রচলিত এ পহেলা বৈশাখকে একজন বিবেকবান মানুষ বাঙালী সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টাও করা অনুচিত।

কারণ ২/৩ যুগ আগেও এসব মঙ্গল শোভাযাত্রা অথবা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রচলিত সংস্কৃতিগুলোর কোনটিরই অস্তিত্ব এ দেশে ছিল না।

অতএব এটাকে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি অথবা সার্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, বরং তা এটি ভুল।

এবার মূল প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক…
পহেলা বৈশাখের ভাতা বা উপঢৌকন গ্রহণ করা যাবে কি? সাহাবায়ে কেরাম তথা খেলাফতের যুগে ইসলাম বিরোধী সংস্কৃতিক উৎসবের উপঢৌকন গ্রহণে কী নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছিল? ইসলাম এ বিষয়ে কী বলে। আসুন জেনে নেয়া যাক-

সাহাবায়ে কেরাম তথা খেলাফতের যুগে আমরা দেখতে পাই, ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে মুসলমানদের কাছে যে উপঢৌকন পাঠাতেন, এটাকে মুসলমানরা গ্রহণ করতেন, সাহাবায়ে কেরামও গ্রহণ করতেন।

– ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ প্রসঙ্গে হজরত আলি ইবনে আবি তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন যে, তিনি নায়রোজ বা নওরোজ (সৌর বর্ষের প্রথম দিন নববর্ষ) উপলক্ষে তাদের পাঠানো উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন।

– মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বায় উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে, তাঁর কাছে একজন নারী এসে জানতে চেয়েছেন যে, তাদের কোনো একজন অগ্নিপূজক দুগ্ধদানকারীনী নারী আছেন, যিনি তার ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষ্যে তাদের উপঢৌকন দিয়ে থাকেন, হাদিয়া পাঠিয়ে থাকেন। তারা সে হাদিয়া গ্রহণ করবে কিনা?

এ প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা ছিলো এ রকম যে-
‘তোমরা তাদের পাঠানো ফলমূলগুলোকে গ্রহণ করবে, এ দিন উপলক্ষে তারা যে পশু জবাই করে সেগুলোর গোশত বা রান্না করা খাবার ইত্যাদি গ্রহণ করবে না।’

কারণ তারা আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবাই করবে সেটাই স্বাভাবিক। আর আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা পশুর গোশত খাওয়া মুসলমানের জন্য জায়েজ নেই। কুরআনে সেটা রয়েছে।

– এছাড়া হজরত আবি বারযা রাদিয়াল্লাহু আনহু নামে একজন সাহাবি ছিলেনে। যার প্রতিবেশিদের অনেকেই অগ্নিপূজক এবং ভিন্ন ধর্মের অনুসারী ছিলেন। তাদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষ্যে তারা (এ সাহাবির বাসায়) উপঢৌকন পাঠাতেন। তিনি তার পরিবারবারকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন যে, তোমরা তাদের পাঠানো ফলমূল এগুলোকে খাবে, গ্রহণ করবে এ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করবে না।’

সাহাবায়ে কেরামের এসব ঘটনাগুলোকে সামনে রাখলেই যে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায় তাহলো-
‘উপলক্ষ যদি নিষিদ্ধ হয় এবং খারাপ কোনো উপলক্ষও হয়। আর সে উপলক্ষকে কেন্দ্র করে কোনো উপঢৌকন দেয়া হয়। সে উপঢৌকনের ভেতরে যদি মন্দ কোনো বিষয়-দিক না থাকে, হারাম কোনো জিনিস না থাকে, সরাসরি উপঢৌকনটা যদি ব্যবহার করা হারাম না থাকে, তাহলে সেটা গ্রহণ করাতে ইসলামি শরিয়াতে বাধা বা নিষেধ নেই।’

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে সরকারি বা বেসরকারি যে ভাতা দেয়া হয়ে থাকে, যেহেতু সেটা নগদ অর্থ অতএব এ নগদ অর্থের ভেতরে সরাসরি কোনো নিষিদ্ধ বা হারাম কোনো কিছু নেই, বিধায় এটাকে গ্রহণ করা যেতে পারে।

বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে…
এ অর্থ গ্রহণ করার পর তা কোন খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা হলো সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আর এ অর্থ গ্রহণ করার পর পহেলা বৈশাখ কেন্দ্রীক যে সব বিজাতীয় অপসংস্কৃতি কিংবা ইসলাম বিরোধী সংস্কৃতি প্রচলিত আছে, সেগুলোতে বৈশাখী ভাতার অর্থ দিয়ে কোনো ধরনের সহায়তা হয় কিনা কিংবা খরচ করা হয় কিনা সেটা হলো বড় বিষয়।

আর বলাই বাহুল্য যে…
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যে ভাতা দেয়া হয়ে থাকে, এ ভাতা গ্রহণ করার মাধ্যমে পহেলা বৈশাখ কেন্দ্রীক যে সব সংস্কৃতি কিংবা ইসলাম বিরোধী উৎসব বা কর্মকাণ্ড আছে তথা শিরক এবং শিরক-এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কার্মকাণ্ড আছে, কোনোভাবেই এ ভাতা গ্রহণ করার মাধ্যমে সেগুলোর সহায়তা হয় না। বিধায় পহেলা বৈশাখের ভাতা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ হবে না।

শুধুমাত্র ভাতা গ্রহণকারীকে যে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, তাহলো-
ভাতা গ্রহণকারী এ ভাতার টাকা দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বা বৈশাখী কোনো অন্যায় অথবা ইসলাম বিরোধী কোনো সংস্কৃতিসহ সাধারণ যত অন্যায় হতে পারে সেগুলোর কানো কাজে এ টাকা খরচ করবে না। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলেই এ ভাতা গ্রহণ করায় ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো অসুবিধা নেই।

মুসলিম উম্মাহর উচিত, বৈশাখী উৎসব সম্পর্কে সজাগ থাকার পাশাপাশি বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে নিজেকে বিরত রাখা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে দুনিয়ার সব অপসংস্কৃতি থেকে নিজেকে বিরত রাখার ও দ্বীনের সঠিক বুঝ লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর