ব্রুনাইয়ে মুছে ফেলা হলো সামাজিক যোগাযোগে হোটেলের অ্যাকাউন্ট

ব্রুনাই বুধবার সমকামিতাসহ বিবাহ বহির্ভূত যৌনতার মতো অপরাধে পাথর ছুড়ে শাস্তির কঠোর আইন চালুর ঘোষণা দেয়।আর এই কঠোর ইসলামিক শরিয়া আইন চালুর কারণে ব্রুনাইয়ের সুলতানের মালিকানাধীন বিলাসবহুল সব হোটেল বয়কটের ডাক ওঠে।এতে লিউডসহ অন্যান্য অনেক তারকা এবং রাজনীতিবিরা বেশ শোরগোল কেড়ে নেয়।

পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে হোটেলগুলো তাদের স্যোশাল মিডিয়া পেজগুলো লুকিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। হোটেলগুলোর একাউন্টগুলো মুছে দেওয়া অথবা সেগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।

ব্রুনাই বুধবার সমকামিতাসহ বিবাহ বহির্ভূত যৌনতার মতো অপরাধে পাথর ছুড়ে শাস্তির কঠোর আইন চালুর ঘোষণা দেয়। এরপর হলিউডসহ অন্যান্য অনেক তারকা এবং রাজনীতিবিরা বিলাসবহুল ওইসব হোটেল বয়কটের ডাক দিলেন। এবার অনলাইনে তুমুল সমালোচনার মুখে হোটেলগুলো তাদের স্যোশাল মিডিয়া একাউন্ট বন্ধ করল।

ব্রুনাই অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধশালী। দেশটির সুলতান বিশ্বের কয়েকটি দেশে বেশ কয়েকটি শীর্ষ হোটেলের মালিক। এর মধ্যে সবচেয়ে অভিজাত ৯ টি হোটেলের দু’টিতে হলিউডের হেভিওয়েটদের আনাগোনা আছে। সময়ে সময়ে সেখানে বিনোদোনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানও হয়। এর একটি হচ্ছে বেভারলি হিলস এবং লস এঞ্জেলেসের হোটেল বেল-এয়ার।

অন্যান্য হোটেলগুলোর মধ্যে আছে লন্ডনের ডর্চেস্টার এবং প্যারিসের হোটেল প্লাজা এথিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের টক শো হোস্ট অ্যালেন ডিজেনারেস বিশ্বে ব্রুনাই মালিকানাধীন ৯ টি হোটেল বয়কটের আহ্বান জানানো একটি টুইটার পোস্ট শেয়ার করলে অনলাইনে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এরপরই স্যোশাল মিডিয়ায় বন্ধ হয় হোটেলগুলোর একাউন্ট। যদিও সব একাউন্ট মুছে দেওয়া হয়নি।

টুইটারে হোটেলগুলোর আটটি একাউন্ট মুছে দেওয়া হয়েছে কিংবা নিস্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। কেবল ইতালির একটি হোটেল পেজ এখনো ওয়েবসাইটে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তবে কোনো টুইট দেখা যাচ্ছে না।

ইন্সটাগ্রামে তিনটি হোটেল বাদে প্রায় সবগুলোর একাউন্টই মুছে দেওয়া কিংবা নিস্ক্রিয় করা হয়েছে। ফ্রান্সের দুটো হোটেল এবং রোমের একটি হোটেলের পোস্ট দেখা যাওয়া ঠেকাতে সেগুলোকে ‘প্রাইভেট’ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ফেইসবুকে সব হোটেলেরই একাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। হোটেলগুলোর পেজে ঢোকার চেষ্টা করলেই পাওয়া যাচ্ছে ‘এরর মেসেজ’।

সবকিদ থেকেই ব্রুনাইকে বয়কট শুরু হয়েছে। শুধু হোটেলই নয়, রয়্যাল ব্রুনাই এয়ারলাইন্সের সঙ্গে চুক্তিরও ইতি টেনেছে ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া এয়ারলাইন্স। অনলাইনজুড়ে এখনো বইছে সমালোচনার ঝড়।

মার্কিন টেনিস তারকা বিলি জিন কিং বুধবারই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, #ব্রুনাইয়ে আজ নৃশংসতা শুরু হল। এর আগে গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সঙ্গীতশিল্পী এলটন জন বলেছিলেন, তিনি অনেকবছর ধরেই লন্ডনের ডর্চেস্টার হোটেলে আর থাকেন না।

বেশির ভাগ মন্তব্যই আসছে হোটেলগুলোর স্টাফদেরকে ঘিরে। ৯ টি হোটেলের ব্যবস্থাপক কোম্পানি ডর্চেস্টার কালেকশন এর স্টাফদের সম্পর্কে একজনের জিজ্ঞাসা, ডর্চেস্টারের সমকামী স্টাফদের পাথর ছুড়ে হত্যার শিডিউল তৈরি করা হচ্ছে কিনা? অনেকেই এসব হোটেলে কাজ করা সমকামী কর্মীদের জন্য সমবেদনাও প্রকাশ করেছে।

অনেকে আবার স্টাফদের আক্রমণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছে, এই বয়কটে শুধু স্টাফরাই ভুক্তভোগী হবে, ব্রুনাইয়ের সুলতান নয়।

স্টাফদের নিয়ে এমন সব মন্তব্যের জেরে ডর্চেস্টার কালেকশন তাদের স্যোশাল মিডিয়া একাউন্টে প্রবেশ বন্ধ করেছে। হোটেল কর্মচারীদের নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের কারণে তারা হোটেলের স্যোশাল পেজ নিস্ক্রিয় করতে বাধ্য হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনাইয়ে বুধবার ইসলামি শরিয়া আইন চালু হয়েছে। এ রাষ্ট্রটির সুলতান হাসানাল বলকিয়া এ আইন চালুর ঘোষণা দেন।

নতুন এ আইনে সমকামিতা ও ব্যভিচারের জন্য পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। তবে সমকামিতা অনেক আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল ব্রুনাইয়ে। সমকামিতা নিষিদ্ধ করে এর শাস্তির বিধান করা হয়েছিল ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।

দেশটির সমকামিতার সমর্থকরা এটাকে ‘মধ্যযুগীয় শাস্তির বিধান’ হিসেবে অভিহিত করে উদ্বেগ জানিয়েছে। দেশটিতে ৮০ শতাংশ মুসলিম রয়েছে।

ব্রুনাইতে নতুন শরিয়া দণ্ডবিধি অনুযায়ী, অভিযুক্তরা যদি নিজেদের সমকামী বলে স্বীকার করেন অথবা অন্তত চারজন প্রত্যক্ষদর্শী তাদের এ ধরনের কাজ করতে দেখেন তবেই তাদের সমকামিতার দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত করা যাবে। তাছাড়া চুরির দায়ে অঙ্গচ্ছেদের মতো দণ্ডও রাখা হয়েছে আইনটিতে।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশটির এক সমকামী ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন, ঘুম থেকে ওঠার পর আপনি অনুভব করলেন প্রতিবেশীরা, আপনার পরিবারের সদস্যরা এমনকি রাস্তার পাশে বসে ভাজা চিংড়ি বিক্রি করা ওই সুন্দরী বৃদ্ধা নারীটিও আপনাকে আর মানুষ বলে ভাবছে না আর তারা পাথর ছুড়ে মারার সঙ্গে একমত।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক নিন্দা

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনানুযায়ী, যে কোনো পরিস্থিতিতে পাথর ছোড়া, অঙ্গচ্ছেদ অথবা বেত্রাঘাত, আইনি সংস্থাগুলোর হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনসহ সব ধরনের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

স্বাক্ষর করলেও ব্রুনেই দারুস সালাম এখনও নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক শাস্তির বিষয়ে ঘোষণাপত্র অনুমোদন করেনি। ২০১৪ সালে জাতিসংঘে দেশটির মানবাধিকার-সংক্রান্ত পর্যালোচনায় ওই ঘোষণাপত্রের সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে অস্বীকার করে তারা।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মূল ঘোষণাপত্রে যে কোনো ধরনের নির্যাতনসহ ও অন্যান্য নিষ্ঠুর শাস্তি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই ঘোষণা প্রত্যেক রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এর অধিকাংশ ধারাগুলোই অনুমোদন করেনি ব্রুনাই।

এদিকে ব্রুনাইয়ের এই শরিয়া দণ্ডবিধির প্রথম অংশটি ২০১৩ সালে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।

দণ্ডবিধির মুলতবি বিধানগুলোতে সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের নামে শিশুসহ যে কাউকে ঢিল ছুড়ে হত্যা ও অঙ্গচ্ছেদের শাস্তি দেওয়া যাবে।

এ আইন নিয়ে ব্রুনাইয়ের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। তারা এখান থেকে ফিরে আসারও আহ্বান করেন।

সূত্র: বিবিসি ও এএফপি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর