অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, ধামরাই

রাজধানীর অদূরে ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) সাধারণ কর্মসূচীর আওতায় ১ম পর্যায়ে মোট দুইটি প্রকল্পে সরকারী বরাদ্দ আসে। চন্দ্রপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে মাটি ভরাট প্রকল্পে ৪.৪০৬১ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দের কাজটি গত ১০ জানুয়ারি, ২০১৯ তারিখে শুরু হয়। সরেজমিন প্রকল্প স্থানে গেলে দেখা যায় কাজটি শেষ করা হয়েছে।

এই কর্মসূচীর দ্বিতীয় প্রকল্পটি হলো ৮.০০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দের বিপরীতে মালঞ্চ মসজিদের মাঠ ভরাট কাজ যা গত ১ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে শুরু হয়ে ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে সমাপ্ত হয়। এই প্রকল্পটি ঘুরে এসে কাজটি ঠিকভাবে শেষ হয়েছে দেখা যায়। এই প্রকল্প দুইটির সভাপতি ছিলেন ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলম।

এই ইউনিয়নে ২০১৮-২০১৯ ইং অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি আর) প্রকল্পে মোট ৮টি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য সরকারী বরাদ্দ আসে। এগুলি হলো- আমতলা আইডিয়াল স্কুল ও কাকরান দাখিল মাদ্রাসা উন্নয়ন (সরকারী বরাদ্দ ৬৫,০০০/-), কাটাবই নতুন মসজিদ উন্নয়ন (৮৬,৫৪২/-), ভাড়ারিয়া উত্তরপাড়া জামে মসজিদ উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-), কাকরান বানিয়াপাড়া জামে মসজিদ উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-), নাহার কিন্ডারগার্টেন সংস্কার (৪৩,২৭১/-), কাকরান দাখিল মাদ্রাসা জামে মসজিদ উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-) এবং রুপানগর জামে মসজিদ উন্নয়ন (৪৩,২৭১/-)। সরেজমিন প্রতিষ্ঠানগুলিতে গিয়ে এদের প্রধানদের সাথে কথা বলে এখানে বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে সম্পন্ন কাজ দেখা হয় এবং সূচারুভাবে কাজ করা হয়েছে দেখা গেছে।

২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এই ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় (১ম পর্যায়) মোট চারটি (০৪) প্রকল্পে মোট নয় লক্ষ চুরাশি হাজার টাকা (৯,৮৪,০০০/-) সরকারী বরাদ্দ হিসেবে আসে। প্রকল্পগুলি ইউপি চেয়ারম্যান ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ সোলাইমান, ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক এবং ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ সুলায়মান এর তত্বাবধানে সম্পন্ন করার দায়িত্ব প্রদান করেন।

প্রকল্পগুলি হলো- মোড়ারচর ভ্যান স্ট্যান্ড হতে মোগর আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ (বরাদ্দ ২,০০,০০০/-), মারমডালি জতিন্দ্র বাড়ি হতে ধলুর পুকুর পাড় পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ (৩,৮৪,০০০/-), ধামরাই-ধানতারা রাস্তা হতে পাইকপাড়া মান্নানের জমি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ (২,০০,০০০/-) এবং কাটাবই বাছেদ মার্কেট হতে রাজা সাত্তারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ (২,০০,০০০/-)।

সরকারি বিধি অনুযায়ী এই প্রকল্পের কাজ শুধুমাত্র হতদরিদ্র শ্রমিকদের দিয়ে করানোর কথা থাকলেও সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকল্প সংলগ্ন স্থানীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক্ষেত্রে সরকারী বিধির ব্যত্যয় ঘটেছে। প্রকল্পের কাজে কিছু অংশ শ্রমিক দিয়ে করালেও সিংহভাগ কাজ ভেকু (খননযন্ত্র) ব্যবহার করে করা হয়েছে।

এব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী তিনজন ইউপি সদস্য ভিডিও বক্তব্যে এই কাজের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। আব্দুর রাজ্জাক কাজ করতে গিয়ে শ্রমিক স্বল্পতা ও তাদের চড়া দৈনিক মজুরির বিষয়টি উল্লেখ করে জানান, ‘সরকারী বরাদ্দ দেয়া হয় মাত্র দুইশত টাকা, অথচ সাড়ে তিনশত টাকার কমে কোনো শ্রমিক কাজ করতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে বেশীরভাগ কাজউ আমাদেরকে ভেকু ব্যবহার করে করতে হয়েছে।

ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম যদিও ভেকু ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেন নাই, তবে তিনি অপ্রতূল সরকারী বরাদ্দের বিপরীতে প্রকল্প সমাপ্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের এমনটি জানালেন।

ধস্মরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামকে ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলিতে সরকারী বিধি না অনুসরণ করার বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি জানান, আমার জানামতে বিধি অনুসারেই কাজ করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে ২য় পর্যায়ে আসা বরাদ্দের প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে আরও নজরদারি বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারী বিধি অনুযায়ী যাতে কাজ করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর