পাঠাগার এখন পেঁয়াজের আড়ত!

মাগুরার মহম্মদপুরের শহীদ আবীর নামের একমাত্র পাঠাগারটি এখন ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গিয়েছে। পাঠাগারটির সামনের অংশ স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী দখলে নিয়ে পেঁয়াজের ব্যবসা করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঠাগারের দরজার সামনে পেঁয়াজের গাঁদা। এর প্রবেশ পথ আটকে রেখে চলছে হাট-বাজারের বেঁচাকেনা। শুধু তাই নয়; পাঠাগারে ভেতরেও দেখা গেছে বড়ই অযত্নে পড়ে আছে চেয়ার-টেবিল ও বুকসেল্ফ। ধুলো-বালি আর ময়লা জমে আছে সেখানে। চেয়ারগুলো সব এলোমেলো।

টেবিলে বিভিন্ন কাগজপত্রের ছড়াছড়ি। এসব দেখাশোনা বা রক্ষণাবেক্ষণের কেউ নেই। পাঠাগারে প্রবেশের পথ আটকে রাখা পেঁয়াজের গাঁদা কার জানতে চাইলে কথা হয় সেই ব্যবসায়ীর সঙ্গে। মো. হান্নান নামের সেই ব্যবসায়ী অবাক করা এক তথ্য দেন।

তিনি বলেন, এখানে পেঁয়াজ রাখার জন্য স্থানটি পাঠাগারের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেই কিনে নিয়েছি। প্রবেশ দরজার তালা-চাবিও আছে আমার কাছে। তবে ব্যবসায়ী হান্নান মিয়ার বক্তব্য মিথ্যা জানিয়ে পাঠাগারের সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ী হান্নানকে পাঠাগার পরিষ্কার রাখার জন্য চাবি দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু তিনি পেঁয়াজের ব্যবসা করছেন এটা আমার জানা নেই। জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে শহীদ হন আবীর হোসেন। তার সম্মানে-স্মরণে তার নামে এই পাঠাগারটি স্থাপিত হয়। একসময় মহম্মদপুরের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকসহ সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষ এই পাঠাগারে বই পড়তে ব্যস্ত দেখা গেছে।

কিন্তু বর্তমানে এটি অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। পাঠকরা আর আগের মতো আসেন না। এখন পাঠাগারের বারান্দায় শুধু পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ। এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, একসময় এই পাঠাগার জ্ঞান বিলাতো। এটি ছিল মহাম্মদপুরের জ্ঞানের প্রদীপ। আর এখন পেঁয়াজের আড়ত।

পাঠাগারটি আধুনিকায়ন না হওয়ায় কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে বলে জানান তারা। স্থানীয়রা ও পাঠাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, পাঠাগারের পরিবেশগত কারণে দিন দিন পাঠক বিমুখ হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এখানে নেই বললেই চলে। পাঠাগারমুখী হচ্ছে না ছাত্র-ছাত্রীরাসহ অন্যান্যরাও।

পাঠককে পাঠাগারমুখী করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে তা সম্ভব হয়নি। মহম্মদপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই মিয়া বলেন, পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে রণঙ্গনে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেন শহীদ আবীর।

তার নামের এই পাঠাগারটি দীর্ঘদিন অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে এবং ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন। এই পাঠাগারটির যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের হাত থেকে দ্রুত অপসারণ করে যোগ্য লোকদের হাতে হস্তান্তর করা হোক। তা না হলে মহম্মদপুরের মুক্তিযুদ্ধোরা কঠোর হতে বাধ্য হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসিফুর রহমান বলেন, পাঠাগারের পাঠক বৃদ্ধির জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর