ঘাটাইলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ৪টি ইউনিয়নের মানুষ

টাংগাইলের ঘাটাইল উপজেলার বৃহত্তম রসুলপুর ও সন্ধানপুর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বইয়ে যাওয়া বংশাই নদীর উপর স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও নির্মিত হয়নি একটি ব্রিজ কিংম্বা সেতু।

ছোট্ট এই একটি ব্রিজের অভাবে পূর্ব পাড়ের রসুলপুর, ধলাপাড়া ও লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়ন ও পশ্চিম পাড়ের রসুলপুর, ধলাপাড়া ও লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়ন এবং পশ্চিম পাড়ের সন্ধানপুর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য বদলায়নি যুগ যুগ ধরে।

বৃট্টিশ আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ডিঙ্গি নৌকা ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে পাড় হতে হয় এসব অ লের ভাগ্যাহত মানুষদের। সরেজমিনে উক্তও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বংশাই নদীর উপর স্থানীয়দের সহায়তায় নির্মিত সাঁকোটি প্রায় দুইশত ফুট লম্বা।

এই সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপর হতে হচ্ছে- স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নয় শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রতিদিন চলাচল করে হাজারো মানুষ।

এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে একটি ব্রিজ নির্মিত হলে একদিকে এই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নয় শতাধিক শিক্ষার্থী নিরাপদে আসা যাওয়া করতে পারবে, অপরদিকে পাল্টে যাবে পুর্ব পাড়ের ৩টি ইউনিয়নের কাজলা, শড়াবাড়ি, পেচার আটা, ধলাপাড়া, ঘোনার দেউলী, রামখালি, কোনাবাড়ি, গাঞ্জানা, চান্দের দেউলী, গান্ধি, গাংগাইর, আমাজানি, বাদামজানি, গোলাবাড়ি সহ প্রায় ৭০টি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা, হাট বাজার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও গ্রামীন ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার। তবে বর্তমানে নদীর দুই পাড় ভাঙ্গনের ফলে সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে মারাত্মক ঝুঁকি ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভুক্তভোগিদের।

বিশেষ করে পেচার আটা দাখিল ও নুরানী মাদ্রাসা, রঘুনাথপুর প্রাইমারী স্কুলের ছোট, ছোট বাচ্চাদের। নদীর পুর্ব পাড়ে রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন সাব সেন্টার গড়ে উঠায় গর্ভবর্তি মহিলা ও বৃদ্ধারা সকল প্রকার চিকিৎসা সেবা থেকে বি ত হচ্ছেন। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের সরকারী বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধা থেকে তারা বি ত হচ্ছেন।

উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা হাজেরা বিবি জানান ছোট্ট বেলায় আমার পারকি গ্রামে বিয়ে হয়েছে। বাবা-মা বেঁচে থাকতে বছরে ২/৩ বার বাবার বাড়িতে বেড়াতে যেতাম ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে নদী পাড় হয়ে। ভাই, বোন, ভাতিজারা নিতে আসলেও বয়সের ভারে এই সাঁকো পার হয়ে যেতে সাহস পাই না। মনে অনেক ব্যাথা নিয়ে বেঁচে আছি। বাবা-মার কবরটা পর্যন্ত দেখার ভাগ্য হয় না।

ধলাপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ শাহ্ আলম বলেন, এই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত বংশ্বাই নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি প্রায় পুর্ব পুর্ব পুরুষদের আমল থেকেই আজ পর্যন্ত ব্রিজটি দেখে যেতে পারেনি, আমিও পারবো না। প্রায় ৭০ বছর আমরা এই দুঃখ কষ্ঠ পোহাচ্ছি।

আগে ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে এই এলাকার মানুষ চলাচল করলেও ১৯৯০ সাল থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারা পার হতে হয়। মনে বড় ভয় লাগে এক সাথে অনেক গুলো ছোট ছোট বাচ্চারা এই সাঁকো পার হয়। পা পিছলে যদি নদীতে পড়ে যায় তাহলে সে হয়তো আর জীবিত অবস্থায় বাবা মায়ের কোলে ফেরত যাবে না।

সন্ধানপুর ইউনিয়নের মোদি দোকানদার ফারুক মিয়া বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এক গ্রামের মানুষ আরেক গ্রামের মানুষের মুখ দেখা সম্ভব হয়না। বর্ষা মৌসুমে স্থানীয়দের সহায়তায় বাঁশ কিনে এনে এলাকাবাসি সবাই মিলে সাঁকোটি মেরামত করে।

ব্রিজ নির্মাণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের নিকট লিখিত ও মৌখিক ভাবে দাবি জানিয়ে আসলেও কোন অদৃশ্য কারণে গত ৭০ বছরেও একটি ব্রিজ তৈরি হয়নি। অন্ততপক্ষে ২ ডজনের বেশি মেম্বার, চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলেও কোন চেয়ারম্যান মেম্বার কিংম্বা এম.পি আমাদের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখেনি। ভোটের সময় এই ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে শুধু ভোটই আদায় করে নেয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না।

এ ব্যাপারে রসুলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার পুর্বেও অনেক চেয়ারম্যান, মেম্বার এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তারাও আজ পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনী। যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে।

শুধু মাপ ঝোক আর আশ্বাসের ভেতরেই সমাপ্তি হয়েছে। আমার আমলে আমি মনে প্রাণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমরা টেন্ডার হওয়ার জন্য স্থানীয় এম.পি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। আশা করি অচিরেই এটার সুফল এলাকাবাসি ভোগ করবে।

বার্তাবাজার/এম.কে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর