মেননের পদত্যাগ করা উচিৎ : ১৪ দল

গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি—বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের দেওয়া এই বক্তব্য সঠিক নয়। পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব-নিকাশ থেকেই তিনি এ ধরনের অসত্য মন্তব্য করে থাকতে পারেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা।

তাদের মতে, এই ধরনের বক্তব্যে বিশ্বাস করলে মেননের উচিত হবে সংসদ সদস্য পদ থেকে এখনই পদত্যাগ করা।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে একটি অনলাই গণমাধ্যকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের একাধিক দলের নেতারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। অবশ্য মেননের বক্তব্যের সঙ্গে তার দল একমত পোষণ করেছে। ১৪ দলীয় জোটভুক্ত এই দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মেনন যথার্থই বলেছেন।

এদিন দুপুরে বরিশালে পার্টির সম্মেলনে মেনন বলেন, ‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।’

১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদসহ তিনটি নির্বাচনে মেনন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই তিন টার্মেই তিনি ঢাকা-৮ থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনয়নে ভোট করলেও প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছেন ‘নৌকা’। তিনি নবম সংসদের শেষ তিন মাস এবং দশম সংসদের পুরোটাই মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে একাদশ সংসদে মেননসহ শরিক দলের কারোই মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি।

মেননের বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। সরকারি দলের সিনিয়র সংসদ সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘মেনন যা বলেছেন, তা মোটেই সত্য নয়। অসত্য কথা বলেছেন তিনি। নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়ে নির্বাচন সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য কোনোভাবেই শোভনীয় নয়।’ একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে তার সতর্ক হওয়া উচিত মন্তব্য করে ফারুক খান আরও বলেন, ‘উনি যেটা বলেছেন, সেটাকে সত্য মনে করলে উনার তো রিজাইন করা উচিত।’

সংসদ সদস্য হিসেবে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে এই ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না মন্তব্য করে সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কেউ যখন বড় পদ-পদবি পাওয়ার পর আবার হারিয়ে ফেলে, তখন তার মাথা ঠিক থাকে না। এমন কিছু হয়তো হবে।’ মেননের কাছে কারণ জানতে চাইলে হয়তো পেয়ে যাবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এটা তিনি কেন বলছেন, কোন অভিমান আর রাগ-ক্ষোভ থেকে বলছেন, তা জানি না।

তবে বাংলাদেশের মানুষ তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। দেশের মানুষ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে দেখতে চেয়েছেন বলেই আজকে এই নির্বাচনকে ঘিরে জনগণের পক্ষে থেকে কোনও মন্তব্য আসেনি।’ বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক স্বার্থ এবং বিভিন্ন হিসাব-নিকাশের কারণে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের মন্তব্য করে রাজনীতিকে ঘোলা করার চেষ্টা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ান হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘উনি উনার কথা বলেছেন। নির্বাচনের প্রায় এক বছর পরে এই কথা উনি বললেন। এটা নিয়ে আমার বক্তব্য হলো, আমি তো আমার গল্প বলেছি, তুমি কেন কাঁদলে? মেনন সাহেব তার গল্প বলেছেন, আমি কেন কাঁদবো?’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘এটা মেননের ব্যক্তিগত মন্তব্য। উনি কেন এ ধরনের মন্তব্য করছেন, সেটা তিনি নিজেই বলতে পারবেন। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা এটা নয়, আমরা নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছি।’ জনগণ এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘এই বক্তব্যের পর উনার সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার পর উনার জাতীয় সংসদে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। সংসদ থেকে এই মুহূর্তে যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে উনার কথা ও কাজের মিল পাবো।’ তা না হলে উনার মন্তব্য কথার কথা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছি। উনি যদি মনে করেন জনগণ ভোট দিতে পারেনি, উনি এসে রিজাইন করুন। উনি দলের পক্ষে একজন নারী সংসদ সদস্য পেয়েছেন, সেখানে তিনি নিজের স্ত্রীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। উনি মুখে বলবেন ভোট হয়নি, আবার সুবিধা পুরোটাই নেবেন!’

তিনি আরও বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটের নেত্রী শেখ হাসিনা। এই বক্তব্যে শেখ হাসিনার প্রতি ডিজলয়্যালিটি প্রকাশ পেয়েছে। উনি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই কথা বলেছেন।’

১৪ দলে থেকে এই কথা বলা উচিত নয় মন্তব্য করে নজিবুল বশর আরও বলেন, ‘উনার উচিত হবে ১৪ দল ছেড়ে দেওয়া। দলের সব সংসদ সদস্যকে নিয়ে এখনই সংসদ থেকে পদত্যাগ করা।’

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী বিশাল কর্মকাণ্ড চলছে। এই সময় শরিক হিসেবে আমাদের কাজ হবে সরকারকে সহযোগিতা করা, কিন্তু তা না করে বিএনপি-জামায়াতের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন মেনন।’ এটা তাদের উৎসাহ জোগাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘আমি ও আমার দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে উনি যথার্থই বলেছেন।’

তিনি বলেন, কেবল আজ নয়, উনি এই কথাটি আরও আগে থেকেই বলে আসছেন। পার্টি তার বক্তব্য ও অবস্থানের সঙ্গে একমত বলেও জানান ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা।

-বাংলা ট্রিবিউন

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর