বাঁচার লড়াই করছে কবর থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতক শিশুটি

উত্তর ভারতে একটি মাটির পাত্রে জীবিত কবর দেয়া যে শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, সে এখন জীবনের জন্য লড়াই করছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সেপটিসেমিয়া এবং মারাত্মকভাবে কম প্লেটলেট গণনার কারণে শিশুটি সার্বিক পরিস্থিতি “গুরুতর” বলে জানিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ রবি খান্না।

তিনি বলেছেন, “তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে আমরা পাঁচ থেকে সাত দিন পরেই নিশ্চিতভাবে সেটা জানাতে পারব।”

পুলিশ “অজ্ঞাত ব্যক্তিদের” বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে এবং বলেছে যে তারা এই কন্যা নবজাতকের বাবা-মাকে খুঁজছে।

শিশুটিকে এভাবে কবর দেয়ার পেছনে তারা সম্ভাব্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও কোন অনুমান করছেন না, তবে লিঙ্গ অনুপাতে বিশ্বের মধ্যে ভারতের অবস্থান খুবই খারাপ।

নারীদের প্রায়শই সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার হন এবং মেয়েদের একটি আর্থিক বোঝা হিসাবে দেখা হয়, বিশেষত দরিদ্র সম্প্রদায়ে।

বারেইলি জেলার সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা ‌আভিনন্দন সিং বলেছেন, শিশুটিকে কবর দেওয়ার পেছনে তিনি শিশুটির বাবা-মায়ের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করছেন কারণ “এই ঘটনাটি ব্যাপক প্রচারিত হওয়ার পরেও কেউই এই শিশুটিকে তাদের সন্তান দাবি করতে এগিয়ে আসেনি”।

বৃহস্পতিবার ঘটনাক্রমে নবজাতকের সন্ধান পেয়েছিলেন গ্রামের এক বাসিন্দা। তিনি তাঁর নিজের অভূমিষ্ট কন্যা শিশুকে কবর দিতে গিয়ে ওই নবজাতকের সন্ধান পান। হিন্দুরা সাধারণত তাদের মৃতদেহ পুড়িয়ে থাকে করে তবে নবজাতক এবং ছোট শিশুদের প্রায়শই কবর দেওয়া হয়।

মিঃ সিং বলেন, “তারা যখন মাটির নীচে প্রায় ৩ ফুট [৯০ সেন্টিমিটার] পর্যন্ত খনন করছিলেন, তখন তাদের কোদালটি একটি মাটির পাত্রে আঘাত করে এবং সেই আঘাতে পাত্রটি ভেঙে যায় এবং তারা একটি শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান। যখন তারা পাত্রটি টেনে ওপরে তুলে আনেন তখন এর ভেতরে তারা ওই শিশুটিকে দেখেন।” মি. সিং বলেন।

নবজাতককে কাপড়ের ব্যাগের ভিতরে মাটির পাত্রে জীবিত সমাধিস্থ করা হয়েছিল।
শিশুটিকে এরপর স্থানীয় সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

“আমার মনে হয় যখন শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয় তখন তার বয়স প্রায় এক সপ্তাহ ছিল,” প্রধান শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৌরভ অঞ্জন বারেইলি থেকে এই তথ্য জানান।

“শিশুটি সময়ের আগেই জন্ম নিয়েছিল, সম্ভবত ৩০ সপ্তাহে জন্মগ্রহণ করেছিল শিশুটি এবং তার ওজন মাত্র ১.১ কেজি। যেটা কিনা জন্মের সময়ে শিশুর আদর্শ ওজনের হিসেবে খুব কম।”

ডাঃ অঞ্জন বলেছেন যে শিশুটি হাইপোথেরমিকও ছিল অর্থাৎ তার দেহের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের চেয়ে কম ছিল। এবং হাইপোগ্লাইকেমিয়া ছিল। শিশুটির রক্তে শর্করার পরিমাণ ছিল ৩৫ যেটা কিনা কমপক্ষে ৪৫ হওয়া জরুরি।)

“শিশুটি খুব ছোট আর দুর্বল ছিলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অক্সিজেন দিয়েছিলাম এবং হাইপোথার্মিয়ার চিকিৎসাও শুরু করি।”

উন্নততর সুবিধা থাকায় রোববার শিশুটিকে ডাঃ রবি খান্নার পেডিয়াট্রিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সূত্র:বিবিসি

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর